পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
১৫৭

শ্রীশ্রীদুর্গা সহায়

মান্দ্রাজ
১লা অক্টোবর (১৯৩২)
শনিবার

পরম পূজনীয়া মেজবৌদিদি,

 আপনার ২রা সেপ্টেম্বরের পত্র আমি ১০ তারিখে পাই এবং ২৪শে সেপ্টেম্বরের পত্র আমি ৩০শে তারিখে (অর্থাৎ গতকল্য) পাই।

 আমার সহিত কেহ দেখা করিতে আসিবে শুনিলে মনটা যেন চঞ্চল হইয়া উঠে। মোট কথা কাহারও আসাটা আমি পছন্দ করি না। তাই অক্ষয় যখন লিখিল সে আসিতে চায়, আমি বারণ করিয়া পাঠাইলাম। মাঝখান থেকে পুলিশ মহোদয়গণ অনুমতি না দেওয়াতে সব মীমাংসা হইয়া গেল। সেদিন খবর পাইলাম যে বড়দাদা আসিতে চান তাই আমি আসিতে বারণ করিয়াছি। এখানে কতদিন আছি তা জানি না হয়তো শীঘ্রই স্থানান্তরিত হইব। সুতরাং মিছামিছি এতদুর আসিবার কোনও হেতু দেখি না। কোনও স্থানে পাকাপাকি ব্যবস্থা হইলে তখন বরং আসিতে পারেন। এইরূপ লিখিয়াছি।

 এখানে কোনও চিকিৎসা আরম্ভ হয় নাই—তা হইতে পারে না। খাওয়াদাওয়া পূর্ব্বের মতই। আহারের পরিমাণ বাড়াইবার চেষ্টা করিলে আবার যন্ত্রণা আরম্ভ হয়। ওজন ক্রমশঃ আরও কমিতেছে।

 সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট সাহেব একরকম নিরুপায়; আমার সম্বন্ধে যাহাতে তাড়াতাড়ি একটা ব্যবস্থা হয় তার জন্য চেষ্টা করিতেছেন। কিন্তু এখনও পর্য্যন্ত ফল কিছু হয় নাই। কিছুকাল পূর্ব্বে কাগজে লিখিয়াছিল যে ভাওয়ালীতে পাঠাইবে। আজ পর্য্যন্ত সরকারী হুকুম কিন্তু আসিল না।

 এখানে আসিবার পর দিদিকে পত্র দিতে পারি নাই বা দিদির কোনও পত্র পাই নাই। মা লিখিয়াছেন যে হয়তো দিদিরা কটকে যাইবেন কিন্তু এখন মনে হইতেছে যে আপাততঃ গোরক্ষপুরেই থাকিবেন।

 গত সোমবার মাকে পত্র দিয়াছি কটকের ঠিকানায়। গত ৮ই তারিখে বাবাকে পত্র দিয়াছি। বাবার পত্র পাইয়াছি—১৭ই তারিখের। মেজদাদার ২রা তারিখের পত্র বাবা পাঠাইয়া দিয়াছেন তাঁর পত্রের সঙ্গে।

 নতুন মামাবাবুকে খবর দিবেন যে, তিনি যে ঔষধ পাঠাইয়াছেন তাহা আজ এখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছে। বড়দাদার ১৭ই সেপ্টেম্বরের পত্রও কাল পাইয়াছি।

 জ্বর পূর্ব্বের মতই প্রত্যহ হইতেছে। এখানে এখনও বেশ গরম। বর্ষা এখনও নামে নাই।

 আপনার জব্বলপুর যাওয়ার খবর আমি এখানকার কাগজে পাই। তারপর আপনার ষ্টেটমেণ্টও এখানকার কাগজে প্রকাশিত হইয়াছিল। যাহাতে প্রত্যেক মাসে কেহ জব্বলপুরে দেখা করিতে যান তার ব্যবস্থা করবেন।

 গোপালী কতদিনের ছুটি পাইয়াছে? স্নেহের মীরা, নেড়ু ও গীতার পত্র পাইয়াছি। নেড়ুর দ্বিতীয় পত্র পাইয়াছি কিন্তু এবার নেড়ু ছাড়া আর কেহ লিখে নাই কেন? গীতা জানিতে চায় এখানকার জেল কয়তলা! সে বুঝি এখানে আসিয়া থাকিতে চায়? এখানকার বাড়ীগুলি দুইতলা এবং মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থাও এ জেলে আছে। এখানকার জেলে জায়গা খুব কম—বেড়াইবার তেমন সুবিধা মোটেই নাই। ঘরগুলি ছোট, তবে হাওয়া খেলে এবং একটা সরু লম্বা বারান্দা আছে। আমি অধিকাংশ সময় বারান্দায় থাকি। নেড়ুর পরীক্ষার ফল শুনিয়া আনন্দিত হইলাম কিন্তু তাহাকে প্রথম স্থান অধিকার করিতে হইবে।

 সেজবৌদিদিরা কেমন আছেন ও আছে? ছোটদাদারা ভাল আছেন আশা করি। ন-দাদার খবর অনেকদিন পাই নাই।

 আশা করি ওখানকার সব কুশল। আমার ভক্তিপূর্ণ প্রণাম জানিবেন। কনিষ্ঠদের ভালবাসা দিবেন। ইতি—

শ্রীসুভাষ