পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২)/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
৩৫
বুধবার রাত্রি
৮-১২-১৫

 আজ University Institute-এ জগদীশচন্দ্রের অভ্যর্থনার জন্য একটি সভা হইয়াছিল। আমি বড় আশা করিয়া গিয়াছিলাম জগদীশের মুখের দুই চারিটি কথা শুনিব—“Just to see him and to hear him speak.” কি জানি কেন, শৈশব হইতে জগদীশচন্দ্র ও বিবেকানন্দ এই দুইজনের প্রতি একটা প্রগাঢ় ভক্তি আছে। তাহাদের ছবি ও তাহাদের সম্বন্ধে ২।৪টি কিংবদন্তী শুনা অবধি বড় আকৃষ্ট হইয়াছিলাম। সভার উদ্দেশ্য ছিল অবশ্য “to honour him by a reception” কিন্তু বাঙ্গালী এবং সর্ব্বোপরি বাঙ্গালী ছাত্রবৃন্দ তাহাকে যে কি ভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত আজ করেছে তাহা স্বদেশভক্ত ভিন্ন অন্য কাহারও হৃদয় বোধ হয় বুঝিবে না। Entertainment-এর মধ্যে গান, দেশীয় বাদ্য, কবিতা পাঠ প্রভৃতি বেশ ভালই ছিল কিন্তু তার মধ্যে English Theatre—actorsরা ছাত্র—বিষয় কি রকম বুঝিতেই পারিতেছ—তারপর শেষে—God save the King! যখন Programme-এ দেখিলাম—acting হইবে তখন একবার মনে হইল চলিয়া আসি—কিন্তু তার কথা শুনিবার লোভে acting-এর সময়ে নিদ্রার সাহায্য গ্রহণ করিতে চেষ্টা করিলাম। উচ্চহাস্যকারী যুবকবৃন্দের মধ্যে Stern Puritan-এর মত চোখ বন্ধ করিয়া বসিয়া রহিলাম, কিন্তু সভাভঙ্গ হইতে চলিল—আমার আশাও পূরণ হইল না। ভগ্নাশ হইয়া ফিরিলাম—এবং ভাবিতে লাগিলাম যে যতদিন আমাদের মহাপুরুষ (greatmen)দের আমরা উপযুক্ত ভাবে সম্মান করিতে না শিখি ততদিন এ বাঙ্গালীর —এ ভারতের উদ্ধার নাই। থিয়েটার দিয়া আবার অভিনন্দন! ছি! ছি! হায় ভারত! হায় বাঙ্গালী, তোমার কি এতদূর অধঃপতন হইয়াছে?

 এ ঘটনাটী আমায় বড় স্পর্শ করেছে। পূজ্যপাদ ধর্ম্মপাল একটি কথা বলেছিলেন সভায় বসে আমার বারংবার মনে পড়িতে লাগিল। So long as men run after sensual pleasure India will not rise. তার কথা ঠিক মনে নাই। তবে ভাবার্থ এই। আমি দেখিলাম sensual pleasure বাঙ্গালীর হাড়ে ২ প্রবাহিত— আর ইহাই মস্তিষ্কবান বাঙ্গালীর দুর্ব্বলতার প্রধান কারণ।

 এর উপায় কি? আমার মনে হয় Counteract করিবার জন্য একদল কঠোর “Puritanic principles” বিশিষ্ট যুবকবৃন্দ চাই। দেশের লোকেদের চোখ খুলে দেওয়া চাই। বাস্তবিক রামকৃষ্ণ জাতীয় চরিত্রের মূল ধরেছিল।

 জানি না জগদীশচন্দ্র এই অভ্যর্থনা কি ভাবে নিয়েছিলেন। স্বদেশভক্ত জগদীশচন্দ্র দেশের দান দুই হাত পাতিয়া অবশ্য লইবেন— ছাইভস্মই দিক্ আর ফুলচন্দনই দিক্‌। কিন্তু এই অভ্যর্থনাতে তিনি যে হৃদয়ে বেদনা পাইয়াছেন তার কোন সন্দেহ নাই।

 আমি “আগামী সোমবারে পাঠ্য” একটী প্রবন্ধ লিখিতেছি— আমাদের Debating Club-এর জন্য— বিষয় “The civilisation of India in the Vedic and Pouranic Age.” তুমি যদি ২।১টি বই এর মধ্যে পাঠাতে পার বা নাম প্রভৃতি hints বা তোমার notes পাঠাইতে পার তাহা হইলে ভাল হয়।

 * * *