পাতা:অক্ষয়কুমার বড়াল গ্রন্থাবলী.djvu/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

He অক্ষয়কুমার বড়াল-গ্রন্থাবলী পরিস্ফুট। তাহারা যেন ভয়ে ভয়ে আসরে আসিয়া, পালা আরম্ভ করিবার পূর্ব্বেই, বিদায় লইবার জন্য ব্যতিব্যস্ত। হটগোল ইহার জন্য কত দূৰ্ব দায়ী, তাহা অনেকেই ভাবিয়া দেখিবার সময় পাইতেছেন না। কবির অক্ষয়কুমার এই যুগের এক জন মুকবি। র্তাহার রচনায় কৃত্রিমতা নাই; আন্তরিকতা আছে। র্তাহার ভাবের আকাশে কুঞ্জ ঝটিকা নাই, শরৎকৌমুদী আছে —তাহার পদবিন্যাস-কৌশলে বহাড়ম্বর নাই, স্বল্পীল সরলতা আছে। এবার কবি অক্ষয়কুমারের নাম সুপরিচিত। কিন্তু এধা যে কবি-প্রতিভার স্বর্ণমন্দির, র্তাহার কনকাঞ্জলি’ প্রভৃতি অন্যান্য কাব্য—তাহারই সুবিন্যস্ত স্ববর্ণ-সোপান। আমি অনেক দিন হইতেই অক্ষয়-গীতিকাব্যের পক্ষপাতী। র্তাহার এক একটি কবিতা হীরার টুকরার মত ঝলমল করে,—অল্প পরিসরের মধ্যে অনেক কথা মনের মধ্যে জাগাইয়া তুলিয়া কাব্যামোদিগণকে বিমল কাব্যানন্দে পূর্ণ করিয়া দেয়। কবি শিক্ষক ও সংস্কারক, কবি দেশসেবক ও দেশনায়ক, কবি সাধক ও উত্তরসাধক। অক্ষয়-গীতিকাব্যে ইহার অনেক পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। “কাব্য নয়, চিত্র নয়, প্রতিমূর্ত্তি নয়, ধরণী চাহিছে শুধু –হৃদয়-হৃদয়।” 비 | যে কবি ধরণীর এই আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করিতে পারেন, তিনিই যথার্থ কৰিপদবাচ্য। অক্ষয়কুমার হৃদয়বান বলিয়াই তাহার গীতিকাব্যে এমন স্পষ্ট কথা অভিব্যক্ত হইয়াছে। হৃদয় যেখানে হৃদয়ের সঙ্গে কথা কহিতে চেষ্টা করে, কৃত্রিমতা সেখানে আড়ম্বর প্রকাশ করিতে পারে না। ভাষার কৃত্রিমতা, ভাবের কৃত্রিমতা, সমানভাবেই অস্তৰ্হিত হইয়া যায়। অক্ষয় গীতিকাব্যে ইহারও অনেক পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। এই প্রিয় কবির কনকাঞ্জলি’র নূতন সংস্করণের ভূমিকা লিখিবার প্রয়োজন ছিল না; কারণ, ‘কনকাঞ্জলি’ বঙ্গসাহিত্যে সুপরিচিত; কিন্তু কবিবর র্তাহার এই স্বন্দর গ্রন্থের সঙ্গে আমার এই ক্ষুদ্র নামটি সংযুক্ত করিবার জন্য যে অবসর দান করিয়াছেন, তাহা ত্যাগ করিতে পারিলাম না। এই গ্রন্থের সকল কবিতাই পৃথক কবিতা, তথাপি সকলগুলির মধ্যেই একটি ভাবের অনুবন্ধ দেখিতে পাওয়া যায়। সে ভাবের প্রবাহ স্বচ্ছ ও অনাবিল — তাহাতে গতি আছে, আবর্ত্ত নাই –উচ্ছ্বাস আছে, তরঙ্গ নাই; সংযম আছে, উচ্ছখলত নাই। এই গুণে অক্ষয়-গীতিকাব্য অলক্ষিতভাবে পাঠকহারে সমবেদনার উয়েক করে। তাহা কখনও কখনও চিত্তকে উদাস করিয়া দেয়, কিন্তু কদাপি তীব্র কামগন্ধে ক্লিষ্ট করে না। র্তাহার প্রেমে লালসা নাই, আত্মবিসর্জন আছে। যাহা স্থায়িরস, তাহাই কাব্যের প্রকৃত রস। সেই রসে অক্ষয়-গীতিকাব্য চির-অভিষিক্ত।