পাতা:অচলায়তন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অচলায়তন

 পঞ্চক। রক্ষা করো দাদা। এটা জপ করতে গিয়ে আমার একবেলাকেই নব্বই বছর মনে হয়—দ্বিতীয় বেলায় মনে হয় মরেই গেছি।

 মহাপঞ্চক। আমার ভাই হয়েও তোমার এই দশা! তোমার জন্যে আমাদের এই অচলায়তনের সকলের কাছে কি আমার কম লজ্জা।

 পঞ্চক। লজ্জার তো কোনো কারণ নেই দাদা।

 মহাপঞ্চক। কারণ নেই?

 পঞ্চক। না। তোমার পাণ্ডিত্যে সকলে আশ্চর্য হয়ে যায়। কিন্তু, তার চেয়ে ঢের বেশি আশ্চর্য হয় তুমি আমারই দাদা বলে।

 মহাপঞ্চক। এই বানরটার উপর রাগ করাও শক্ত। দেখো পঞ্চক তুমি তো আর বালক নও—তোমার এখন বিচার করে দেখবার বয়স হয়েছে।

 পঞ্চক। তাই তো বিপদে পড়েছি। আমি যা বিচার করি তোমাদের বিচার একেবারে তার উলটো দিকে চলে, অথচ তার জন্যে যা দণ্ড সে আমাকে একলাই ভোগ করতে হয়।

 মহাপঞ্চক। পিতার মৃত্যুর পর কী দরিদ্র হয়ে, সকলের কী অবজ্ঞা নিয়েই এই আয়তনে আমরা প্রবেশ করেছিলুম, আর আজ কেবল নিজের শক্তিতে সেই অবজ্ঞা কাটিয়ে কত উপরে উঠেছি, আমার এই দৃষ্টান্তও কি তোমাকে একটু সচেষ্ট করে না।

 পঞ্চক। সচেষ্ট করবার তো কথা নয়। তুমি যে নিজগুণেই দৃষ্টান্ত হয়ে বসে আছ, ওর মধ্যে আমার চেষ্টার তো কিছু মাত্র দরকার হয় না। তাই নিশ্চিস্ত আছি।

 মহাপঞ্চক। ওই শঙ্খ বাজল। এখন আমার সপ্তকুমারিকাগাথা পাঠের সময়। কিন্তু বলে যাচ্ছি সময় নষ্ট ক’রো না।

প্রস্থান