পাতা:অতিথি (প্রথম বর্ষ ১৯৩০).pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যৌবনের রঙ আঙুলের গায়ে যৌবনের ছাপ দিয়া যায় একটা তরুণ লাবণ্য, যার জ্যোতি সকলের-নিতাস্তপক্ষে আমার, চোখকে একটু মুগ্ধ ও ক্ষুব্ধ না করিয়া যায় না । মুগ্ধ করে কেন না, একটী নূতন মানুষকে সে আমার অস্তরের চোখের কাছে চিনাইয় দেয় ; কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ ন হইয়া থাকিতে পারি না এইজন্য যে, যে মানুষটা আজ আমার হৃদয়দ্বারে আঘাত দিল, সে আজই হোক, কালই হোক নিজের স্বরূপটী তাহার কাছে অকপটে প্রকাশ করিবেই—যাহার নাড় তাহার মনে একটা তোলপাড় আনিয়। তবে নিষ্কৃতি দিবে ; সে রূপসম্বন্ধে অত্যন্ত সচেতন হইয় পড়িবে ; নিজেকে বারে বারে আশাঁর সম্মুখীন করবে ; সাশীর আড় দিয়া ছাদের কোণে উকি মারিতে শিখিবে ; অপরের রূপের সঙ্গে মনে মনে তুলনা করিয়া নানান খুং ধরিবে ; নূতনের নেশা-ঘেরে উপন্যাসের রূপ বদলাইয়। যাইবে ; যাহার কড়া শাসনের উৎপাতে উপন্যাসে হাতেখড়ি হয় নাই, সে বন্ধুদের বাড়ীতে বসিয়া পরম মুথের আস্বাদন লইবে ; যে ভ্র-যুগল সর্ব্বদ। উৎফুল্ল-চঞ্চলতায় কখনে কুঞ্চিত, কখনো প্রসারিত হইত, এখন তাহ নিরুদেশ চিন্তার ছায়ায় ঘন ঘন আনত হইবে ; আঁথির ঠারে, হয়ত বা কথার ধারে, নিজের বেশ বিন্যাস-পঢ়তার প্রশংস৷ অন্ততঃ বন্ধুদের কাছে ভিক্ষা বা আদায় করিবে ; কেমন একটা অস্বস্তির ছোয়াচে জীবনের ব্যর্থতা উপলব্ধি করিবে; কেমন একটা সৌন্দর্ঘ্যের কল্পনার আতিশয্যে কাব্যপাঠে মন টানিবে বা কবিতা লিখিবার ঝোক চাপিবে ; মম যৌবন-নিকুঞ্জে গাহে পার্থী, সখি জাগে|” ইত্যাদি ধরণের গানের অফুরান স্থর কণ্ঠে বাণ বধি। সময়ে অসময়ে কাণে না আসিতেই কাজ ওলাইয় পার্থীর মত প্রাণকে পাখা মেলিতে শিখাইবে ; কণ্ঠে কুর বম্বক আর নাই বন্ধক, গুন গুন করিয়া গলা সাধিতেই হইবে, যেন সে গানটীকে কাহারও মনের মন্দিরে লিখাইতে চায় । এমনি এমন কয়েকটী বিশেষ লক্ষণ স্বতঃই প্রকাশ পায় যাহাঁতে যৌবনের আবির্ভাব সম্বন্ধে কাহারও সন্দেহের অবকাশ থাকে না । সর্ব্বোপরি দেখা দেয় এমন একটা আত্মস্থতা, বা কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মসর্ব্বস্ব-ভাব, যাহা একান্তই যৌবনের নিজস্ব । এইরূপ যেীবনরঙে রূপান্তরিত হওয়া যে মানবমনের স্বাভাবিক সুস্থতার ও ক্রমোন্নতির চিহ্ন, তাহ কাহাকেও বুঝাইয়া দিতে হয় না। এই স্বাভাবিক পরিণতির স্বতঃস্মৃষ্টি কিন্তু আমাদের দেশে, বিশেষতঃ সহরে, অনেকেরই জমিয়া উঠিব৷র অবসর পায় না। এখানে অনেকেই মনের দিক দিয়া হয় অকালবৃদ্ধ না হয় সর্ব্বথা শিশু ; হয় পরীক্ষাভার গ্রস্ত, সুতরাং একেবারে নিরীহ, না হয় উত্তেজনার পর উত্তেজনা সঞ্চয়ে অযথা চঞ্চল। যাহাদের দূর থেকে যুবা বলিয়া ভ্রম হইয়াছে, নিকটপরিচয়ে বুঝিয়াছি তাহাদর মনে যৌবনের আঁচ লাগেনি ; এমনি একট। শীতলতার গুণ্ঠনে, কুষ্ঠায় সঙ্কোচে নিজেদের জড়াইয়। রাখিয়াছে সে দ্বারে আগত জাগ্রত বসন্তের গম্ভীর আহবান তাদের প্রাণে উদ্দীপনার ক্ষীণ স্পন্দনটুকু জাগাইতেও ভুলিয়া যায় । যাদ্ধাদের মনে এই ীেবনফাগের রঙ ধরেনি, তাহদের জীবন প্রকৃতির দিক থেকে সম্পূর্ণরূপেই বিসদৃশ ও ব্যর্থ হইয়া গিয়াছে। প্রকৃতি একদিন-ন-একদিন আপনার নির্ম্মমহাতে ইহার প্রতিশোধ দিবেই এবং আমাদের মন? সে বিধানে অজ্ঞাতসারে সানন্দেই সায় দিবে। কিন্তু এমনও কেহ কেহ আছে, যাদের যৌবনের ফুল না ফুটিতেই সন্ধ্যার ঝঞ্চায় ঝরিয়া যায় ; যাদের জীবনে ীেবনের দুঃসহ আবেগ শুধু ভ্রাস্তির পর ভ্রাস্তি স্থষ্টি করিয়া মরীচিকার মত উদভ্রান্ত, দিক-ভুল করিয়া দিয়াছে ; যাদের জীবনে ীেবনের মুখ বিদ্যুৎবিলাসের মত নিমেষের স্মৃতিমাত্র ; তাদের জীবনের ব্যর্থতার গভীরতা কী দিয়| মাপিবে ! কিন্তু এই বিস্ময়বিমূঢ় হার অন্তরালেই আত্মগোপন কর। ত ীেবনের ধর্ম্ম নয় ; এ যে নিরীহতারই তন্দ্রিল রূপ, নিরুৎসাহেরই প্রচ্ছন্ন নামান্তর। তাদের জীবনে প্রকৃতির প্রতিশোধের তীক্ষু জালা ঠিক স্পর্শমণির কাজ করেনি, বরং আপনার আস্তরতম স্বরূপটকে বিকৃত ও অসুন্দর করিয়া চোখের ভ্রান্তি জন্মাইয়া দিয়াছে। এখন