পাতা:অতিথি (প্রথম বর্ষ ১৯৩০).pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অতিথি

প্রকৃতির স্নিগ্ধ কোন প্রলেপন তাহারা চায় না; চায়— তাহাদের অতীত সুন্দর স্বরূপটাকে আর একজনের হৃদয়ের ছায়ায় রাখিয়া যে সুখ, যে আনন্দ, সেই নির্ম্মল, নিবিড়, শাস্ত সমাহিত সৌন্দর্ঘ্যের প্রত্যক্ষ অনুভূতি। কিন্তু আমরা যে আমাদের যৌবনের স্বপ্নে বিভোর হইয়া, আত্মমুখের চর্চায় একাগ্র হইয়া, তাহাদের সেই ব্যথিত, স্নেহাতুর হৃদয়ের দাবী একেবারেই বিস্মৃত হই। সেই পীড়িত হৃদয় অজস্র সহানুভূতির তাপে জাগাইয়া, সচেতন করিয়া, চোখের জলে বর্ত্তমানের ধূলা আবর্জনা সরাইয়া, তাহাদের অতীত রূপটকে চিনাইয়া দেওয়ার কর্ত্তব্যটা প্রায়ই ভুলিয়া যাই—এতই আমরা নিজেদের বাহিরটাকে লইয়া ব্যস্ত থাকি। কিন্তু যৌবনের রঙে রঙিস্বা থাকা এত সহজ নয়। যৌবনের আত্মস্থতা অপরিহার্য্য, কেননা সে আপনার সম্বন্ধে অতি অধিকমাত্রায় সজাগ; কিন্তু সে আপনার সীমায় ধরাবাধা থাকিতে আদবেই ভালবাসে না—আপনাকে কেন্দ্র করিয়া বহুতে বিস্তৃত হইয় যাওয়াই তাহার স্বভাব। তাই যাহারা আত্মসর্ব্বস্ব, তাহার যৌবনমন্দিরের বাহিরেই থাকিয়া যায়; মন্দিরের দ্বার উদঘাটনে যে সোনার কাঠির স্পর্শ মন্ত্রবৎ, কার্য্য করে, তাহার কথা তাহাদের স্মরণে থাকে না; দেহের যে অবর্ণনীয়, স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য মনের, আত্মার সহজ, সরল বিকাশের সঙ্গে অপরূপ সার্থকতায় মণ্ডিত হয়, যৌবনের সেই অতুল প্রাণ-স্বরভিচর্চিত তমুর ভ্রাণ-বিষয়ে তাহদের
ইন্দ্রিয়ের চেতনা লুপ্ত হইয়াছে,—নহিলে কৃত্রিম গন্ধের আশ্রয় লইতে চায় কেন? এই সন্দিহান ভাব লইয়া যেন আমলা যৌবনের ফাগ গায়ে মাখিয়া মাতামাতি না করি। কারণ, তাহ’লে মাতামাতিটাই সার হইবে; অবসাদের বিস্বাদে বা উত্তেজনার তিক্তভায় অন্তদের মত একটা শূন্যতার মাঝে আসিয়া পড়িতে হইবে। অন্য যাহাদের কথা বলিতেছি, তাহদের অভিজ্ঞতার নিকটে মরা সোণার মত যৌবনের মরা দিকটা সহজেই ধরা পড়ে, এবং তাহার প্রাণের দীর্ঘনিঃশ্বাসটাকে ধীরে চাপিয়া বলে, “আমারাও এককালে ঐরকমই ছিলাম।” এমনি সব ক্ষুদ্র, চাপা নিঃশ্বাসের অস্তস্থলে আমাদের-বয়সী, বিপথগামী, লুপ্তযৌবন হৃদয়গুলির যে গভীর বেদনা লুকাইয়া আছে, যে মূক অভিশাপ তাহারা বহন করিতেছে, প্রকৃতির যে ক্রুর পরিহাস তাহারা ব্যক্ত করিতেছে, যাহাঁদের মনে যথার্থ যৌবনের আগুন জ্বলিয়াছে, তাহারা কি সেই বেদনা, সেই অভিশাপ, সেই পরিহাসের মসীলেখা জ্বালাইয়া ছাই করিয়া সোণার রঙে প্রাণ-কদর প্রোজ্জল, দীপ্তিময় করিয়া তুলিবে না; তাহাদের নিঃসঙ্গ মনে যৌবনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিয়া আপন দের অন্তরঙ্গ সঙ্গীরূপে বরণ করিবার আশায় ক্ষণেক পথে থামিয়া যাইবে না? এ যাহারা করিল না, তাদের যৌবনের রঙ শুধু গায়েই লাগিয়াছে, মনে লাগে নাই—কারণ তাহারা অপরের যৌবনের রঙ চিনিল না।

আমাদের কথা

 ইচ্ছে ছিল আমাদের ভারি—একটা মাসিক বার করি আমরা জন কয়েক বন্ধু মিলে; তাই ভেবেই ছাপতে দিয়েছিলাম; ভাদ্রমাসেই কার্য্য আরম্ভ হবে এই-ই ছিল কথা। মত বদলাল—আশ্বিনে-ই বের হবে। আশ্বিনে বেরুল বটে- তবে মাসিক নয় একখানা complete individual পুস্তিকা। কেন? অত inquisitive নাই বা হ’লেন? মাত্র, বন্ধুর স্মৃতি-নিদর্শনরূপেই কী এ ‘অতিথি’কে নিতে পার্ব্বেন না? নমস্কার।

প্রকাশক। 

২২