পাতা:অদ্ভুত ফকির - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অদ্ভুত ফকির।
৩১

 বেলা সাতটার সময় আমি বৈঠক খানা হইতে বাহির হইলাম এবং গৌরী বাবুর কথামত তাঁহার বাড়ীর দাস দাসী প্রভৃতি সকলেরই এজেহার লওয়া হইল। কিন্তু বিশেষ কোন ফল হইল না। সকলেই একই কথা বলিল। বলিল, হত্যাকাণ্ডের বিষয় তাহারা কিছুমাত্র অবগত নহে।

 বাড়ীর সকলের এজেহার লওয়া হইলে আমি আরও অনেক লোককে ফকিরের সম্বন্ধে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিলাম; গৌরী বাবুর দাস দাসী ও বাড়ীর লোকেরা সকলেই বলিল যে, ফকিরের নিকট প্রত্যহ অনেক লোকের সমাগম হইত। তাহাদের মধ্যে পরিচিত ও অপরিচিত সকল লোকই থাকিত। কিন্তু অপর লোকেরা বলিল, ফকির অপর কোন লোকের সহিত মিশিত না, সে হয় সেই উদ্যানমধ্যস্থ নিজ কুটীরে বসিয়া একাকী ঈশ্বরচিন্তা করিত, নতুবা উদ্যান-বাটীকার দালানে বসিয়া গৌরীশঙ্করকে সৎপরামর্শ দান করিত। মোট কথা এই যে, ফকির এক গৌরীশঙ্কর ভিন্ন আর কোন লোকের সহিতই মিশিত না।

 এই সমস্ত কার্য্য শেষ করিয়া আমি গৌরীবাবুর ভূতপূর্ব্ব ম্যানেজার বাবুর সহিত সাক্ষাৎ করিলাম। দেখিলাম, তিনি অতি সজ্জন। তাঁহার বয়স পঞ্চাশ বৎসরেরও অধিক। জমীদারী সেরেস্তার কর্ম্মে তিনি একজন পাকা লোক। যদিও গৌরীবাবু তাঁহার তত্বাবধানে জমীদারী রাখিয়া যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছিলেন, তত্রাপি তাঁহার কোন দোষ দেখিলাম না। তিনি গৌরীবাবুর মঙ্গলের জন্য—জমীদারীর উন্নতির জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু যখন অদৃষ্ট বিমুখ হয়, তখন অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোকেও ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া থাকে।