পাতা:অদ্ভুত ফকির - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অদ্ভুত ফকির।
৪১

 আ। গৌরীশঙ্করকে ভুলাইবার জন্য তাঁহাকে সদুপদেশ দিয়া তাঁহার আর্থিক অবস্থা ও জমীদারীর আয়ের উন্নতি করিয়া তাঁহার বিশ্বাসের পাত্র হইয়াছিলেন; এবং তাঁহার অনুপস্থিতিতে যাহা যাহা ঘটিয়াছিল তাহার সমস্ত জানিয়া লইয়াছিলেন।

 আবদুল পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, “হুজুর, আর একটী জিজ্ঞাস্য আছে। হরশঙ্কর কি কেবল পৈত্রিক সম্পত্তি লাভের আশায় ভ্রাতৃহত্যা করিল? এই সামান্য জমীদারীর জন্যই হরশঙ্কর এত ভয়ানক পাপকর্ম্মে লিপ্ত হইল?

 আমি হাসিয়া উত্তর করিলাম, “না, কেবল পৈত্রিক বিষয়ের লোভেই হরশঙ্কর নরহত্যা করে নাই। আরও একটা গুরুতর কারণ ছিল। হরশঙ্কর পিতৃহত্যা করে নাই, গৌরীশঙ্করই প্রকৃত পিতৃঘাতী। কিন্তু দোষ পড়ে হরশঙ্করের উপর। হরশঙ্কর সে সময় তাহা প্রমাণ করিতে পারে নাই; সে দ্বিরুক্তি না করিয়া বিশ বৎসর কারা-যন্ত্রণা ভোগ করিল। সেই প্রতিশোধ লইবার জন্যই সে প্রত্যাগমন করিয়া গৌরীশঙ্করকে হত্যা করিয়াছে। গৌরীশঙ্কর এমন কৌশল করিয়া পিতৃহত্যা করিয়াছিল যে, তখন তাহার উপর কেহই সন্দেহ করে নাই। সকলেই হরশঙ্করকে দোষী বলিয়া সাব্যস্ত করিয়াছিল। সেই জন্যই গৌরীশঙ্কর সে যাত্রা বাঁচিয়া গিয়াছিল। গৌরীশঙ্করের পাপের কথা এক হরশঙ্কর ভিন্ন আর কেহই জানিত না। কিন্তু তখন তাহার কথায় কেহই বিশ্বাস করিবে না বলিয়া, সে সেকথা প্রকাশ করে নাই। মনে মনে প্রতিহিংসা লইবার প্রতিজ্ঞা করিয়া সে আণ্ডামান দ্বীপে নির্ব্বাসিত হইয়াছিল। এখন বুঝিতে পারিলে, হরশঙ্কর কি ভয়ানক লোক!”