পাতা:অদ্ভুত ভিখারী - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অদ্ভুত ভিখারী।
২৩

অংশে হীন। গাত্রে একটী শতগ্রন্থি অতি পুরাতন জামা রহিয়াছে। গাত্র অত্যন্ত মলিন। দেখিলেই বোধ হয়, যেন একপুরু ময়লা জমিয়া গিয়াছে। মুখে যেন একটী কাটার দাগ, তাহার উপর আবার ঠোঁট উল্টান থাকায় তাহার বিশ্রী আকৃতি আরও কুৎসিত হইয়াছে।

 যখন আমরা আসামীকে এইরূপে দেখিতেছিলাম, তখন সেই কর্ম্মচারী আমাদিগকে লক্ষ্য করিয়া কহিলেন, “কেমন? আমি যাহা বলিতেছিলাম, তাহা সত্য নয় কি? এমন সুপুরুষ আর কোথাও দেখেছেন কি? অনেক অনেক কদাকার পুরুষ দেখিয়াছি কিন্তু এরূপ কদাকার ব্যক্তিকে আমি যে কখন দেখিয়াছি তাহা আমার অনুমান হয় না।” এইরূপ অবস্থা দেখিয়া আমি সেই কর্ম্মচারীকে কহিলাম, “আমি ইচ্ছা করি, লোকটাকে একবার পরিষ্কার করিয়া দিয়া দেখি যে, উহাকে কিরূপ দেখায়, আমি মনে মনে এই অভিপ্রায় করিয়াছি। এই ব্যাগে স্নানের আবশ্যকীয় সকল দ্রব্য সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছি, এখন আপনি যদি আমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়া এই কামরার দরজা খুলিয়া দেন, তাহা হইলে আমি বিশেষ বাধিত হই।” এই বলিয়া আমি একখানি স্পঞ্জ বাহির করিলাম, সেই স্পঞ্জখানা এবং সেই ব্যাগের মধ্যে অন্যান্য দ্রব্যগুলি দেখিয়া কর্ম্মচারী সহসা হাস্য সম্বরণ করিতে পারিলেন না। মুখে বলিলেন, “আপনার চিরকালই সমান গেল। আসুন, আর বিলম্বে প্রয়োজন নাই। আপনি ত অনেক দেখিয়াছেন, বলুন দেখি, এই হাজতগৃহে এমন কুৎসিত আসামী ইতিপূর্ব্বে আর কখন আসিয়াছে কি? ওরূপ কদাকার লোক আমার হাজতের কলঙ্ক-স্বরূপ।”