পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাণ্ড চরণকমলে আমার ভক্তি অচল থাকে, যেন তোমার ভক্তের সঙ্গ লাভ চিরকাল আমার ভাগ্যে ঘটে। আর ভক্তিহীন ব্যক্তিও যদি এই স্তোত্র পাঠ করে, তাহা হইলে তোমার ভক্তি ও বিজ্ঞান লাভ করিয়া অস্তে যেন তোমার নাম স্মরণ করিতে পারে।” রাম “ তথা “ বলিয়া সম্মতিপ্রদান করিলে পরশুরাম তাহাকে প্রণাম ও প্রদক্ষিণ করিয়া এবং তৎকর্তৃক পূজিত হইয়া তীয় অনুজ্ঞ গ্রহণপূর্বক মহেন্দ্রপৰ্বতে গমন করিলেন । রাজা দশরথ শ্রীরামকে যেন মৃত্যুমুখ হইতে পুনঃপ্রাপ্ত হইলেন । তাহার আনন্দের সীমা রহিল না। তাহার নয়নযুগল হইতে অবিরলধারে আনন্দাশ্র বিগলিত হইতে লাগিল । তিনি ঐরামকে বার বার আলিঙ্গন করিতে লাগিলেন এবং প্রকৃতিস্থ হইয়া প্রীতমনে স্বনগরে গমন করিলেন । অনন্তর অমর-সদৃশ ভ্রাতৃ-চতুষ্টয় স্ব স্ব ভার্য্যা সমভিব্যাহারে নিজ নিজ মন্দিরে পরমসুখে কালযাপন করিতে লাগিলেন। বৈকুণ্ঠ-ধামে বিষ্ণু যেমন কমলার সহিত আনন্দে কালহরণ করেন, ঐরাম পিতা মাতার হর্ষবৰ্দ্ধন করিয়া জানকীর সহিত সেইরূপ আনন্দ-সহকারে কাল অতিবাহিত করিতে লাগিলেন । * , এইরূপেকিছুকাল অতীত হইলে একদা ভরতের মাতুল যুদ্ধাজিং স্বীয় ভাগিনেয়কে স্বরাজ্যে লইয় যাইবার নিমিত্ত প্রীতি-প্রফুল্ল-মনে অযোধ্যায় আগমন করিলেন । অরিন্দম জেহাদ্র হৃদয় রাজা দশরথ যুদ্ধাজিংকে যথাবিধানে পূজা করিয়া ভরত ও শক্রস্তুকে তাহার সহিত পাঠাইয়া দিলেন । শোভনা কোঁসল্যা রামসীতার শোভায় শোভিত হইয়া ইন্দ্র ও শচী সমন্বিতা দেবমাতার ন্যায় শোভা পাইতে লাগিলেন। যাহার অতুল গুণগ্রাম লোকনাথ সমাজে প্রসিদ্ধ, সমস্ত লোকে র্যাহার কীর্ত্তিকলাপ কীর্ত্তিত, যিনি অখিল-জন-গণের আনন্দসন্দোহ স্বরূপ, যিনি নিত্য পরাশক্তিসম্পন্ন, অতএব যাহার বিভবের অন্ত নাই; আচরণশক্তিরূপা মায়। যাহা হইতে নিরস্ত হইয়া থাকে, সেই অখিলপতি দেবদেব নারায়ণ ভগবতী সীতার সহিত মায়াকার্য্যানুযায়ী সামান্ত মানবের ন্যায় অযোধ্যাধামে শোভা পাইতে লাগিলেন। সপ্তম অধ্যায়ে আদিকাণ্ড সমাপ্ত। ' እግ অযোধ্যাকাণ্ড । প্রথম অধ্যায় । মহদেব কহিলেন, একদা নীলোৎপলদল খামল ঐরাম গলদেশে কৌস্তভ ও সর্ব্বাঙ্গে নানাবিধ ভূষণ ধারণপূর্বক স্বীয় অন্তঃপুরমধ্যে রত্নসিংহাসনে মুখে উপবেশন করিয়া তামূল, চর্ম্মণাদি করিতে করিতে সীতার সহিত আমোদ-প্রমোদ করিতেছেন এবং জানকী রত্নদণ্ড বিশিষ্ট চামর দ্বারা তাহাকে ব্যজন করিতেছেন,এমন সময়ে দেবর্ষি নারদ –রাখব যেখানে অবস্থিত, তাহাকে দর্শন করিবার নিমিত্ত আকাশপথ হইতে সেই স্থানে অবতরণ করিলেন । শরচ্চন্দ্র তুল্য সুবিমল কাস্তিবিশিষ্ট এবং শুদ্ধস্ফটিক-সঙ্কাশ সেই দিব্যদর্শন মুনিকে অকস্মাৎ সমাগত হইতে দেখিয় শ্রীরাম ব্যস্তসমস্ত ভাবে স্বীয় আসন হইতে কৃতাঞ্জলিপুটে উখিত হইলেন এবং সীতার সহিত প্রীতি ও ভক্তিসহকারে ভূমিতলে মন্তক লুষ্ঠিত করত প্রণাম করিয়া সহৰ্ষে কহিলেন, “মুনিশ্রেষ্ঠ ! আপনার দর্শন সাংসারিক ব্যক্তিদিগের, বিশেষত মাশ বিষয়াসক্ত জনগণের পক্ষে নিতান্ত দুল্লভ ; তথাপি আমার পূর্ব্বজন্মকৃত মহাপুণ্য ফলে আপনার দর্শনলাভ করিলাম। হে মুনে! সংসার ব্যক্তিও কাকতালীর ন্যায়ে সাধুসঙ্গ প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। হে মুনীশ্বর ! অদ্য আপনার দর্শনলাভে আমি কৃতার্থ হইলাম। এক্ষণে আপনার কোন কার্য্য করতে হইবে, তাহা আদেশ করুন ; আমি সাধন করিতেছি।” দেবর্ষি নারদ ভক্তবৎসল ঐরামের ঐ সমস্ত কথা শ্রবণ করিয়া কহিলেন, “হে রাম ! লোকামুসারী লক্ষ্যছটায় আমাকে আর মুগ্ধ করিতেছেন কেন । প্রভো! আপনি য়ে আপনাকে সংসারী বলিয়া পরি. চয় দিলেন তাহ সম্পূর্ণই সত্য; কারণ এই ত্রিজগৎস্বরূপ মহাগৃহে আপনি একমাত্র গৃহস্থ মূলপ্রকৃতি মায় আপনার গৃহিণী । তাহাতে আপনার দ্বারা ব্রহ্মাদি পুত্রগণ উৎপন্ন হইয়াছেন। সেই ত্রিগুণাত্মিক মায়া আপনাকে আশ্রয় করিয়া সর্ব্বদ সত্ত্ব, রজ ও তমোগুণময় প্রজা সকলকে প্রসব করিতেছেন। ভগবন! আপনি বিষ্ণু, জানকী লক্ষ্মী ; আপনি শিব, জনক-তনয় শিব; আপনি ব্রহ্মা, সীতা সরস্বতী; আপনি স্থর্য্য,জানকী প্রভা, আপনি শশাঙ্গ, শুভলক্ষণ সীতারোহিণী ; আপনি ইত্র, সীতা শচী; আপনি অগ্নি, সীতা স্বাহ । আপনি কালরূপী যম ।