পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ8 স্থচক কথা বলিতে লাগিলেন;–“আমি স্ত্রীবশ, ভ্রাস্তবুদ্ধি ও বিপথগামা ; আমাকে নিগৃহীত করিয়া বলপূর্ব্বক এই রাজ্যগ্রহণ কর; তাহাতে তোমার পাপ হইবে না ; এবং হে রঘুনন্দন ! এইরূপ । করিলে আমাকেও সত্যচু্যত হইতে হইবে ন৷ ” এই বলিয়া রাজা তখন সাতিশয় দুঃখে বিলাপ করিতে লাগিলেন ;–“হ রাম । তুমি ত্রৈলোক্যপালনে উপযুক্ত এবং আমার প্রাণের প্রিয়। হায় ! হায় ! ! আমাকে পরিত্যাগ করিয়া কিরূপে তুমি ঘোর অরণ্যে গমন করিবে ?” রামকে আলিঙ্গন করিয়া ইত্যাদি বিবিধ-প্রকারে মুক্তকণ্ঠে রোদন করিতে লাগিলেন । সেই নীতিবিশারদ রাম সজল পাণিদ্বারা পিতার নয়নযুগল মুছাইয়া দিয়া ক্রমে সাস্তুনা করিতে লাগিলেন ;–প্রভো | এবিষয়ে দুঃখ করিতেছেন কেন ? আমার কনিষ্ঠ ভরত রাজ্যশাসন করুকৃ ; আমি প্রতিজ্ঞাপালন করিয়া আপনার নগরে পুনরাগমন করিব রাজন্‌ ! আমি বনে থাকিলে রাজ্য হইতে কোটি গুণ সুখবোধ করি ; আর হে দেব ! তাহাতে আপনার সত্যপালনরূপ কার্য্যও অনুষ্ঠিত হইবে * । হে রাজন্‌ ! আমার বনবাস কৈকেয়ীরও অভিমত ; এবং উহার গুণও অনেক। আমি এখন যাইতে ইচ্ছ করি ; মাতা কৈকেয়ীর মনোর্যথা দূর হউক, আর অভিষেকের জন্য আগত দ্রব্যাদি এক্ষণে অপস্থত হউক। মাতাকে সাস্তুনা ও জানকীকে অনুনয় করিয়া আসিয়া আপনার চরণ-বন্দনা করিব ; তৎপরেই মুখে বনগমন করিব। এই বলিয়া রাম রাজাকে প্রদক্ষিণ করিয়া মাতাকে দেখিতে আসিলেন ; তখন কৌসল্যাও রামের মঙ্গলার্থ বিষ্ণুর পূজা করিয়া হোম করাইলেন এবং ব্রাহ্মণগণকে বহুধন প্রদান করিলেন; তাহার পর মৌনভাবে একাগ্রচিত্তে বিষ্ণুচিস্তা করিতেছিলেন; তিনি অস্তরে অবস্থিত, অনন্তু চৈতন্যপ্রকাশ, সর্ব্বময়, সর্ব্বাতিশায়ী সদানন্দময় একমাত্র বিষ্ণুকে হৃদয়কমলে ধ্যান করিতেছিলেন, সন্মুখাগত রামকে দেখিতে পাইলেন না । তৃতীয় অধ্যায় সমাপ্ত ।

  • "জাপমার সত্তাপালন এবং দেবগণের কার্য্য সিদ্ধিও হইবে" ।

তবে এ অর্থে "হে দেব। এই সম্বোধনটুকু থাকিবে না । ७ई निगूंछ वर्ष७ भूज नवख् । অধ্যাত্ম-রামায়ণ । চতুর্থ অধ্যায়। অনস্তর, সুমিত্র, রামকে দেখিয় তাড়াতাড়ি কৌসল্যাকে জানাইলেন ;–“রাম সম্মুখে দণ্ডায়মান ।” কৌশল্যা, রাম নাম শ্রবণে নেত্র উন্মীলনপুর্ব্বক বিশাললোচন রামকে অবলোকন করিলেন ; অমনি তাহাকে আলিঙ্গনপূর্বক ক্রোড়ে বসাইলেন এবং মস্তকান্ত্রণ করিয়া নীল-কমলকাস্তি তদীয় গাত্রে হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিলেন, “পুত্র! কাল উপবাস করিয়া আছ ; নিশ্চয় ক্ষুধার্ত্ত হইয়াছ ; কিছু মিষ্টান্ন ভোজন কর।” রাম বলিলেন;–“মা ! আমার ভোজন করিতে অবসর নাই ; আজ আমার অবিলম্বে দণ্ডকারণ্য গমনের নিৰ্দ্ধারিত দিবস। আমার সত্যপ্রতিজ্ঞ পিতা, কৈকেয়ীকে যে বর দিয়াছেন, তাহাতে ভরতকে রাজ্যপ্রদান এবং আমাকে উত্তম-অরণ্য-বাসে আদেশ করিয়াছেন। মুনিবেশ ধারণপুর্ব্বক তথায় চতুর্দশবৎসর বাস করিয়া পুনরায় শীঘ্রই আসিতেছি চিস্তা করিবেন না।” তাহা শ্রবণ করিবামাত্র কৌসল্যা তৎক্ষণাৎ উদ্বেগবশে মুছিত হইয়। পড়িলেন ; সাতিশয় দুঃখে কাতরা—দুঃখসমুদ্রমল্পীরামজননী কিয়ৎক্ষণ পরে পুনরায় উঠিয়া রামকে বলিতে লাগিলেন ;—“রাম রে! যদি সত্য সত্যই তুই বনে যাস, তবে আমাকেও লইয়া চল — বাবা! তোকে ছাড়িয়া আমি ক্ষণাৰ্দ্ধও প্রাণধারণ করিব কিরূপে ? যেমন গাভী অতি শিশুবৎস ছাড়িয়া কোন স্থানে থাকিতে পারে না, সেইরূপ আমিও প্রাণ আপেক্ষ প্রিয়ুপুত্র—তোকে ত্যাগ করিতে পারি না। রাজা যদি ভরতের প্রতি প্রসন্ন হইয়া থাকেন, তাহাকে রাজ্য দান করুন, আমার প্রিয়পুত্র—তোকে বনবাসের জন্ত আদেশ করিতেছেন কেন ? রাজা কৈকেয়ীর বরপ্রদ হইয়া সর্ব্বস্বই তাহাকে দান করুন না কেন ? কৈকেয়ীর বা রাজার কাছে,—তুই বাবা! কি অপরাধ করিলি যে, রাজা তোকে বনবাস দিতেছেন ? রামরে । পিতা যেমন তোর গুরু ; আমিও ত, বাপ ! তদপেক্ষ তোর অধিক গুরু ; তোর পিতা তোকে বনে যাইতে অনুমতি দিয়াছেন, আমি তোকে যাইতে বারণ করিতেছি ; তুই ত আমারও পুত্র। যদি আমার বাক্য লঙ্ঘন করিয়া রাজার কথায় বনে ঘাস, তাহা হইলে আমি তৎক্ষণাৎ প্রাণত্যাগ করিয়া যমসদনে গমন করিব” । তখন লক্ষণও কৌসল্যার কথা শুনিয়া সক্রোধদর্শনে ত্রিভুবন দগ্ধকরত রামকে বলিতে লাগিলেন;–