পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ 。 শয় অপবিত্র এবং নশ্বর, এইরূপ আত্মা ও অনাত্মা সম্বন্ধে বিচার করিলে কোনরূপেই শোকের অবকাশ । থাকে না। পিতা বা পুত্র যদি মরে, তাহ হইলে অধ্যাত্ম-রামায়ণ । গৃহে উপবিষ্ট হইলেন, ভাবিতে লাগিলেন – রাম, জনকনন্দিনী ও লক্ষ্মণের সহিত ঘোরতর অরণ্যে গমন করায় রাক্ষসী-সদৃশী আমার জননী মূঢ়গণ নিজ শরীরে আঘাত পূর্বক তাহার জন্য ! দৃষ্টিগোচর হইলেই তৎক্ষণাৎ হৃদয় দগ্ধ করিতে শোক করে। আর এই অসার-সংসারে প্রিয়বিয়োগ, জ্ঞানিগণের বৈরাগ্য-জনক হয় এবং শান্তি সুখ প্রদান করে। এই জগতে যদি জন্ম হয়, তাহা হইলে মৃত্যু ও তাহার অনুগামী ; অত এর জন্মীদিগের মৃত্যু সর্ব্বতোভাবে অপরিহরণীয়, । যে ব্যক্তি তত্ত্বজ্ঞ নহে, সে ত ইহা জানে যে, সকল । প্রাণীগণেরই উৎপত্তি-বিনাশ স্ব-স্ব-কর্ম্মাধান ; তবে কেন বান্ধবদিগের জন্য শোক করে । যখন কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে ; অনেকানেক গুটি অতীত হইয়াছে; সাগর সকল ও বিশুদ্ধ হয় ; , তখন আর এই ক্ষণভঙ্গুর মনুষ্য জীবনে আস্থা কি ? | থাকে । আমি কৃতনিশ্চয় হইলাম ;—সমগ্র রাজ্য দূরে পরিহার করিয়া অদ্যই অরণ্যে গমন করিব, তথায় গিয়া ঈষৎ হাস্তযোগে রুচির-বদন সীতাসমেত রামকে আমি নিত্য সেবা করিব । সপ্তম অধ্যায় সমাপ্ত । অষ্টম অধ্যায় । শ্রীমহাদেব কহিলেন;–প্রভু বলিষ্ঠ, মুনিগণের সহিত ও মন্তিগণে পরিবৃত হইয়া দেবসভা-সদৃশ চঞ্চল-পত্রের প্রান্ত-লগ্ন জলবিদুর ছায় ক্ষণস্থায়ী আয়ু রাজসভাতে প্রবেশ করলেন। তথায় দ্বিতীয় ব্রহ্মার অসময়েও ফুরাইয়া যায় ; অতএব তাহাতে তোমার স্থায়িত্ব-বিশ্বাস কেন ? দেহী, পুর্ব্বতন-দেহে-অনুষ্ঠিত কর্ম্মফলে পুনরায় দেহ-সম্পন্ন হয় ; এবং সেই দেহুে-অনুষ্ঠিত কর্ম্মফলে অন্ত দেহ; এইরূপে আত্মার সর্ব্বদাই দেহ-বন্ধন হইতে থাকে। লোকে যেমন জীর্ণ-বস্ত্র পরিত্যাগ করে, নুতন বস্ত্র গ্রহণ করিয়া, সেইরূপ দেহী ক্রমাগত জীর্ণ দেহ পরিত্যাগ করিয়৷ নবজাত দেহ ধারণ করিয়া থাকে। আত্মার মৃত্যু নাই ; জন্ম নাই ; বৃদ্ধি নাই ; আত্মা,—জন্ম প্রভৃতি ষড়বিকার-বর্জিত ; অনন্ত ; সত্য ; নির্ব্বিকল্পক জ্ঞান-স্বরূপ ; আনন্দময় ; বুদ্ধি প্রভৃতির সাক্ষী ; ও লয় রহিত । আত্মা,—এক ; প্রকৃতির পরবর্তী ; অদ্বিতীয় এবং সর্ব্বত্র সমভাবে অবস্থিত। আত্মাকে এইরূপে দৃঢ় বিশ্বাস করিয়া শোক পরিত্যাগ করিয়া কার্য্য কর। হে কুলানন্দ ! সচিবগণ সমভিব্যাহারে তৈলদ্রোণী হইতে পিতৃ-দেহ তুলিয়া স্বয়ং ও আমাদিগের দ্বারা পিতার ঔদ্ধদেহিক ক্রিয়া সম্পাদন কর। সাক্ষাৎ গুরু বলিষ্ঠ এইরূপ বুঝাইলে, তখন ভরত, অজ্ঞান-মুলক শোক পরিত্যাগ করিয়া যথাবিধি পিতৃকার্য্য করলেন। বসিষ্ঠের যথাবিধি আদেশমত, বিধি-বিহিত কর্ম্মানুসারে সাগ্নিক-পিতার দেহ সৎকার করিয়া একাদশ-দিবসে শত শত সহস্ৰ সহস্ৰ বেদ-পারগ ব্রাহ্মণ ভোজন করাইলেন ; সেই দিবসে পিতার স্বর্গ উদেশে ব্রাহ্মণদিগকে বহুধন বহুসহস্ৰ গো, বন্ধগ্রাম, বিবিধ রত্ব ও বস্ত্র দান করি, লেন। তখন ভরত, রামকেই চিন্তা করত বসিষ্ঠ, ভ্রাতা শক্রয় এবং মন্ত্রিগণে পরিবৃত হইয়া নিজ হ্যায় সেই মুনি আসনে আসীন হইয়া সানুজ ভরতকে আনয়নপুর্ব্বক সেইখানে উপবেশন করাইলেন ; অনন্তর শত্রু-সূদন ভরতকে দেশকালোচিত কথা বলিতে লাগিলেন ;–“বৎস! তোমার পিতার অনুমতিবশতঃ আজ আমরা তোমাকে রাজ্যে অভিষিক্ত করিব। হে পুরুষশ্রেষ্ঠ ! আমরা জ্ঞাত আছি ; কৈকেয়ী তোমার জন্য রাজ্য যাদ্ধা করেন ; প্রথমে প্রতিজ্ঞাপাশে বদ্ধ হওয়ায় সত্যপ্রতিজ্ঞ রাজা দশরথ তোমাকে তাহ দান করিয়াছেন। মুনিগণ মন্ত পাঠ করিয়া আজ তোমার অভিষেক কার্য্য সম্পাদন করুন।” তাহা শুনিয়া ভরতও বলিলেন;–“মুনিবর! রাজ্যে আমার প্রয়োজন কি ? রামই রাজাধিরাজ ; আমরা তাহার কিঙ্করমাত্র ; আমি, আপনার এবং কৈকেয়ী রাক্ষসী ব্যতীত মাতৃগণ—আমরা সকলে আগামী কল্য প্রভাতে শীঘ্র রামকে আনয়ন করিবার জন্য গমন করিব । কৈকেয়ী আমার জননী হইলেও তাহাকে এখনই আমি বধ করিতে পারি; কিন্তু তাহা হইলে স্ত্রীহস্তা বলিয়া রঘুবর রাম আমাকে ক্ষমা করিবেন না। সে যাহা হউক ; আপনার আগমন করুন বা না করুন—অদ্য রাত্রি প্রভাত হইবামাত্র শক্রন্থের সহিত আমি সত্বর পদব্রজে দণ্ডকারণ্যে গমন করিব । রামযেরূপে বনে গিয়াছেন হে মুনিবর। সেইরূপ শত্রুগ্ম-সহ আমিও যাবৎ রাম প্রতিনিবৃত্ত না হন, তাৰং বহুল পরিধান, ফলমূল ভোজন, ভূমিশয়ন ও জটা ধারণ করিয়া থাকিব” । ভরত এইরূপ স্থির করিয়া তুৰ্কীস্তাবে