পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ψ ο সমস্ত কার্য্য সম্পাদন করিলেন ; হে রঘুনন্দন ! যাবৎ কাল আমি আপনার সম্মুখে অগ্নি প্রবেশ পূর্ব্বক শরীর দগ্ধ করিয়া বৈকুণ্ঠ ধামে গমন না করি, সেই মুহূর্ত্ত কাল এ স্থানে আপনি অবস্থিতি করুন। শবরী শ্রীরামচন্দ্রের সহিত এইরূপ সত্তাক্ষণাত্তর অগ্নি প্রৱেশ করিয়া ক্ষণ কালের মধ্যে অবিদ্যা-জনিত ংসার বাসন পরিত্যাগ পূর্বক ঐরামের প্রসাদে অতি দুল্লভ মুক্তিলাভ করিল। ভক্তবৎসল জগন্নাথ শ্রীরাম প্রসন্ন হইলে জগতে কি কোন বস্তু চুল্লভ থাকে ? কি আর বলিতে হইবে, কারণ, দেখ নীচকুলমন্তবা শবরাও ত্রীরাম-প্রসাদে অতি দুৰ্লভ মুক্তি পদ লাভ করিল। ঐরামোপাসক পুণ্যশীল প্রধান ংশসস্তৃত ব্রাহ্মণের যে মুক্তিলাভ করবে, তাহাতে ংশয় নাই। যেহেতু ঐরামে ভক্তিই মুক্তির সাধন; হে সাধুগণ ! এই জগতে রাম-ভক্তিই মোক্ষের একমাত্র উপায়। র্যাহার চরণকমল-যুগল অভীষ্টসিদ্ধিপ্রদ, সেই রামকে অতি উৎকণ্ঠিতভাবে সেবা কর । হে পণ্ডিতগণ যাগ যজ্ঞাদি মন্ত্র সকল পরিত্যাগ করিয়া কেবল মহাদেবের হৃদয়রত্ব স্বরূপ তামলাঙ্গ রামরূপ অনবরত ভাবন কর । অরণ্য-কাণ্ডে দশম অধ্যায় সমাপ্ত । কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড । প্রথম অধ্যায় । শ্রীমহাদেব কহিলেন —জনস্তর, রাম, লক্ষ্মণ সমভিব্যাহারে ক্রমে ক্রমে পম্পা সরোবর-তীরে উপস্থিত হইয়া সেই সরোবর দর্শনে বিস্ময়ান্বিত হইলেন। তাহ এক ক্রোশ বিস্তীর্ণ; অগাধ ; নির্ম্মল-জল ; প্রফুল্ল-পদ্মকালার, কঙ্কলার, কুমুদ এবং কমলকুলে ভুযিত ; হংস ও কারণ্ডবকুলে পরিবৃত ; চক্রবাক প্রভৃতি জলজপক্ষী দ্বারা শোভিত এবং জলকুক্কুট, টিটিভ ও ক্রৌঞ্চদিগের কুজনে প্রতিধ্বনিত ; তাহার তীর নানাবিধ কুসুমিত লতাজাল ও বিবিধ ফল-ভার-নম্র তরুগণে আবৃত; কমলকিঞ্জস্ব-গন্ধে সুবাসিত ; সেই সরোবরের জল সাধুদিগের হৃদয়ের দ্যায় স্বচ্ছ । তথায় রাম অনুজ সমভিব্যাহারে আচমনপূর্ব্বক শ্রমাপনোদন ও জলপান করিয়া সরসীতটের শীতল পথে গমন করিতে লাগিলেন। জিতেক্রিয়, জটাৰস্বলধারী—সুবিক্রম রাম, লক্ষ্মণ ধনুর্ব্বাণ-হস্তে বিবিধ বৃক্ষরাজি ও পর্ব্বতের শোভা দেখিতে দেখিতে ঋষ্যমূক পর্ব্বভের পার্থে অধ্যাত্ম-রামায়ণ । গমন করিতে লাগিলেন । চারজন বানরের সহিত গিরিশিখরে অবস্থিত সুগ্রীব, তাহাদিগের দুইজনকে গমন করিতে দেখিয়া ভয়ে গিরিশিখরাগ্রে আরোহণ করিল এবং হনুমানকে বলিল ;—“সখে ! তোমার মঙ্গল হউক ; দ্বিজৰূপী বটু হইয়া যাও ; এই বীর দুইজন কে ? জানিয়া আইস ; বালিপ্রেরিত হইয়া আমাকে বধ করিতে আসিয়াছে কি না ? তাহাদিগের সহিত আলাপ করিয়া তাহাদিগের মনোগত কথা জান গিয়া। যদি বুঝ, তাহারা দুষ্ট হৃদয়, তাহা হইলে করাগ্র দ্বার সঙ্গেত করিও ; বিনয়-নম্র হইয়া এই সকল তথ্য অবগত হইও।” যে আজ্ঞা, বলিয়া হনুমান বটুরূপে উপস্থিত হইল; এবং শ্রীরামকে প্রণাম পূর্ব্বক বিনয়-নম-ভাবে বলিল ;– “যুবা পুরুষ-শ্রেষ্ঠ বীরসম্মত আপনার দুই জন কে ? দেখিতেছি, ভাস্করযুগলের দ্যায় আপনার স্ব স্ব শরীর কান্তি দ্বারা দিজুগুল উদ্ভাসিত করিতেছেন । আপনার দুই জন ত্রিলোকের কর্ত্ত, ইহা আমার মনে লইতেছে ; আপনার দুই জন জগতের হেতু, জগন্ময়, প্রধান-পুরুষ ; লীলাবশে মায়াবলে মনুষ্য. তাকারে যেন বিচরণ করিতেছেন ; পরম পুরুষদ্বয় ভুভার হরণ ও ভক্ত পালনের জন্য ক্ষত্রিয়রূপে অবতীর্ণ হইয়া এখানে গমন করিতেছেন । তাপ, নারা অবলীলাক্রমে জগতের স্বষ্টি, স্থিতি ও সংহার করিতে উদ্যত, স্বাধীন, সর্ব্বপ্রবর্তক, সর্ব্বাস্তামী, ঈশ্বর নরনারায়ণ ; ইহলোকে বিচরণ করিতেছেন— ইহা আমার বিশ্বাস ।” ঐঃাম, লক্ষ্মণকে বলিলেন ; “এই বটুরূপীকে দর্শন কর; এই বট, নিশ্চয়ই অনেক প্রকার শব্দশাস্ত্র সম্পূর্ণরূপে শ্রণি করিয়াছে, এ ব্যক্তি অনেক কথা কহিল ; কিন্তু কিছুমাত্র অপভ্রংশ কথা বলে নাই ।” অনন্তর জ্ঞান-বিগ্রহ রাঘব হনুমানূকে বলিলেন;–“আমি দশরথনন্দন রাম, ইনি আমার অনুজ লক্ষ্মণ ; পিতৃ-বাক্যের গৌরব রক্ষার্থ তামি, ভার্য্যা সীতার সহিত দণ্ডকারণ্যে আগত হই; হে দ্বিজ ! আমি তথায় কিছুকাল থাকি। কোন রাক্ষস আমার ভার্য্যা সীতাকে তথা হইতে হরণ করিয়া লইয়া গিয়াছে, সেই ভার্য্য৷ অন্বেষণার্থ এখানে আসিয়াছি ; তুমি কে ? এবং কাহার ?—বল।” বটু বলিল ;–“সুগ্রীবনাম মহামতি বানররাজ, মন্ত্রি-চতুষ্টয়ের সহিত গিরি-শিখরে অবস্থান করেন । সুগ্রীব, পাপ-চিত্ত বালির কনিষ্ঠ ভ্রাতা; সেই বালী ইহাকে নিষ্কাশিত করিয়া দিয়া ইহার ভার্ধ্যা হরণ করিয়া লইয়াছে —সুগ্রীব তাহার ভয়ে ঋষ্যমূক * আশ্রয় করিয়৷ আছেন ।