পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড । হে মহামতি! আমি সুগ্রীবের মন্ত্রী ; আমি বায়ুর ঔরসে অঞ্জন-গর্ভে উৎপন্ন ; আমার নাম হনুমান । হে রঘুবর ! সেই সুগ্রীবের সহিত আপনার সখিত্ব করা উচিত হইতেছে। আপনার ভার্য্যাপহারীকে বধ করিতে তিনি সহায় হইবেন । যদি রুচি হয় ত আসুন, এখনই তাহার নিকটে গমন করি " ত্রীরাম বললেন;–“হে কপিশ্রেষ্ঠ ! আমিও তাহার সহিত সখ্য করিতেই আসিয়াছি ; সেই সখারও যাহা প্রয়োজন, আমি নিশ্চয় তাহ সম্পাদন করিব।” হনুমান আপন স্বরূপে অবস্থিত হইয়া রামকে বলিল ;—“আমার স্কন্ধদ্বয়ে আপনার দুইজন আরোহণ করুন, যেখানে স্ট্র গ্রীব, বালিভয়ে মন্ত্রিগণ সমভিব্যাহারে অবস্থিত,সেই পর্ব্বত-শিখরে গমন করি।” “আচ্ছা” বলিয় রাম— তৎপরে লক্ষণ তদীয় স্কন্ধে আরোহণ করিলেন । মহা কপি, ক্ষণমাত্রে গিরিশিখরে উথিত হইল। রাম-লক্ষ্মণ, কোন এক বৃক্ষচ্ছায়া আশ্রয় করিয়া অবস্থিত রছিলেন। হনুমানও সুগ্রীবের নিকট কৃতাঞ্জলি-পুটে গমন করিয়া কহিল ;–“রাজন! আপনি নির্ভয় হউন ; শ্রীরাম-লক্ষণ আসিয়াছেন ; সত্বর গাত্রোখান করুন ; আমি রামের সহিত আপনার সখ্য-সম্বন্ধ স্থির করিয়াছি ; এখন অগ্নি সাক্ষা করিয়া শাস্ত্র র্তাহার সহিত সখ্য করুন অনস্তর সুগ্রীপ অতি হর্ষে রঘুবর-সমীপে আগমনপূর্বক তদীয় আসনের জন্য স্বয়ং বৃক্ষশাখা ছেদন করিয়া আনন্দ-পূর্ব্বক তাহাকে পত্রসকল প্রদান করিল। হনুমান লক্ষণকে এবং লক্ষ্মণ সুগ্রীবকে আসনার্থ পত্রপুঞ্জ দান করিলেন। তখন-মহাহৃষ্ট হইয়া সকলে উপবিষ্ট হইলেন। লক্ষণ, ঐামের আমূলৰ্বত্তাস্ত বলিলেন ; বনবাস ও সীতাহরণ বৃত্তাস্ত বিশেষ করিয়া বলিলেন । সুগ্রীব, লক্ষ্মণ-কথিত বাক্য শ্রবণ করিয়া রামকে কহিল ;–“হে রাজেন ! আমি সীতাম্বেষণ করিব ; রাম " আপনি যখন শত্রু বধ করিবেন, তখন আপনার সাহায্যও করিব । রাম! আমি যাহা কিছু দেখিয়াছি, তাহা বলিতেছি শ্রবণ করুন । একদা আমি মন্ত্রিগণের সহিত গিরিশিখরে বসিয়া আছি, এমন সময়ে দেখিলাম –কোন ব্যক্তি এক প্রমদোত্তমাকে হরণ করিয়া লইয়া যাইতেছে, ঐ বর বর্ণিনী—কেবল “রাম রাম” বলিয়া আর্ত্তনাদ করিতেছিলেন ; আমাদিগকে পর্ব্বতোপরি দেখিয়া স্বীয় উত্তরীয় বস্ত্র দ্বারা শীঘ্র শীঘ্র সেই সকল অলঙ্কার বন্ধন করিয়া পুনরায় ཨཤ་ལ། নিরীক্ষণ পূর্ব্বক لا يا তাহা নিক্ষেপ করিলেন। রোরুদ্যমান ঐ রমণীকে সেই রাক্ষস হরণ করিয়া লইয়া গেল। প্রভু হে! আমি শীঘ্র সেই সকল ভূষণ লইয়া গুহাতে নিক্ষেপ করিয়া রাখিয়াছি । এখন আপনি দেখুন ; দেখিয়া বুঝুন, সেই সকল অলঙ্কার আপনার কি না। এই বলিয়া বানররাজ সত্বর তাহ আনয়ন পূর্ব্বক রামকে প্রদান করলেন। রাম, খুলিয়া তাহ দেখিলেন; অনন্তর তৎসমস্ত বক্ষঃস্থলে স্থাপন পূরক বারবার “হা সীতা" বলিয়া প্রাকৃত ব্যক্কিম ইgায় রোদন করিতে লাগিলেন। ভ্রাতা লক্ষ্মণ, রাবকে আশ্বাসিত করিয়া এই কথা বললেন,—“রাম আপনি বানররাজের সাহায্যে যুদ্ধে রাবণ বধ করিয়া অবিলম্বে কল্যাণী জানকীকে প্রাপ্ত হইবেন । সুগ্রীবও বলিল ;–“রাম হে ! আমি আপনার নিকট প্রতিজ্ঞা করিতেছি ;–সংগ্রামে রাবণ বধ করিয়া আপনার জানকী উদ্ধার করিয়া দিব” । অলs: হনুমান, তাহাদিগের উভয়ের সমীপে অগ্নিপ্রচলন পূর্বক সখা করিতে বলিল। তখন নিষ্পাপ সুগ্রীব ও রাম উভয়ে, অগ্নি-সাক্ষী থাকিতে, পরস্পর বাহুযুগল প্রসারণপূর্বক আলিঙ্গন করিয়া “সখা" সম্বোধন করিলেন। মুগ্রীব, রঘুনাথ সমীপে উপবিষ্ট হইল। প্রণয়বশতঃ রঘুনাথ সকাশে স্বীয় বৃত্তাস্তু বলিতে লাগিল –“হে সখে ! পুর্ব্বকালে বালা যাহা করিয়াছিল, আমার বৃত্তাস্তঘটিত সে সকল কথা শ্রবণ করুন : একদা মায়াবী নামে পরম-দুর্ম্মদ ময়, পুত্র, কিষ্কিন্ধ্যায় সমাগত হইয়া যুদ্ধের জন্য মাহসিংহ নাদ দ্বারা বালীকে আহ্বান করিল। বালী তাহা সহ করিতে না পারিয়া ক্রোধ-রক্ত-নয়নে নির্গত হইল ; এবং তাহাকে দৃঢ়-মুষ্ট্যাঘাত করিল। মায়াবী, তাহাতে ব্যথিত হইয়া স্বীয় গৃহাভিমুখে পলায়ন করিতে লাগিল ; বালী, সেই মায়াকুশল মায়াবী দৈত্যকে তদীয় গুহায় প্রবিষ্ট হইতে দেখিয়া ক্রোধে তাহার অনুগমন করিল ; আমি বালীর অনুবী হইলাম। অমত্র, বালা আমাকে বলিল ;–“তুমি বহির্ভাগে থাক, আমি গুহামধ্যে প্রবেশ করি” । বালী এই বলিয়া গুহ। প্রবেশ করিল; একমাস তাহা হইতে নিৰ্গত হইল না। এক মাসের পর গুহাদ্বার হইতে বহুতর শোণিত নিঃস্থত হইল ; তাহা দেখিয়া বালী নিহত হই য়াছে নিশ্চয় হওয়ায় দুঃখিত ও সস্তপ্তচিত্ত হইলাম। অনস্তর গুহ্যদ্বারে এক প্রস্তরখণ্ড স্থাপন করিয়া গৃহে আসিলাম। অনস্তর বলিলাম ; বালার মৃত্যু হইয়াছে; একজন রাক্ষস, গুহার অভ্যস্তরে