পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লঙ্কাকাণ্ড । হইবে “ অগস্ত্য মুনি এই কথা বলিলে ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ শুক, তৎক্ষণাং রাক্ষস হুইল; এবং রাবণ সন্নিধানে আসিয়া থাকিল। সম্প্রতি শুক, চরক্কপে সানুজ বামকে দর্শন করিয়া এবং রাবণকে তত্ত্বজ্ঞান উপদেশ দিয়া সত্বর পুনর্ব্বার পূর্ববং ব্রাহ্মণ হইল ; এবং বৈখানসগণের সহিত অবস্থিতি করিতে লাগিল । অনস্তর বুদ্ধিমান, নীতিকুশল, মাল্যবান্‌ নামে প্রধান বৃদ্ধ রাক্ষস তথায় আগমন করিল ; মাল্যবান রাজার প্রিয়পাত্র এবং মাতামহ। আসিয়া—প্রশান্ত অস্তঃকরণে সেই বীর রাক্ষসকে বলিতে লাগিল — "রাজন! অদ্য আমার বাক্য শ্রবণ কর, শুনিয়া ইচ্ছামত কার্য্য করিও। ষে পর্য্যন্ত রামপ্রিয় জানকী নগরে প্রবেশ করিয়াছেন, হে দশানন। তদবধি নগরে যে সকল নাশস্থচক ঘোর নিমিত্তসকল দৃষ্টিগোচর হইতেছে, তাহা আমি বলিতেছি শ্রবণ কর। “অতি ভয়ঙ্গর মেঘগণ কঠোর গর্জন করিতেছে, কড় কড় শব্দে বজ্রপাত হইতেছে এবং লঙ্কা নগরে নিরস্তর উষ্ণ শোণিত বর্ষণ হইতেছে ; দেবপ্রতিমাসকল রোদন করি. তেছে, ঘর্ম্মাক্ত এবং প্রচলিত হইতেছে ; কালিকা বিশদ দশনরাজি প্রকটিত করিয়া হাস্ত করত সকল রাক্ষসের সম্মুখভাগে অবস্থান করিতেছেন। গো-গর্ভে গর্দভ উৎপন্ন হইতেছে ; মূষকগণ নকুল ও মার্জারগণের সহিত ও সৰ্পগণ গরুড়ের সহিত যুদ্ধ করিতেছে । কাল ;–কৃষ্ণ-পিঙ্গল মুণ্ডিত-মুণ্ড বিকটাকার করাল-পুরুষরূপে প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাকালে সকলের গৃহে উকি ঝুকি মারি: তেছে। এই সকল দুর্নিমিত্ত এবং অন্যান্য দুর্নিমিত্তসকল দৃষ্টিগোচর হইতেছে ; আরও নূতন নূতন দুর্নিমিত্ত উৎপন্ন হইতেছে । অতএব হে দশানন । কুল-রক্ষার জন্য ইহার যাহাতে শাস্তি হয়, তাহা কর। হে রাবণ | সীতাকে রত্নাদি প্রদানপুর্ব্বক সম্মানিত করিয়া শীঘ্র রামচন্দ্রকে প্রদান কর । রামকে সাক্ষাৎ নারায়ণ বলিয়া জানিও ; রাঘবের প্রতি বিদ্বেষ পরিত্যাগ কর। ভক্তি-বিশুদ্ধ-চিত্ত জ্ঞানিগণ যাহার চরণ-তরণি আশ্রয় করিয়া ভব: সমুদ্র পার হন, সেই রাম মনুষ্য নহেন ; সর্ব্বাস্ত র্য্যামী সেই রামচন্দ্রকে ভক্তিভাবে ভজনা কর। যদিও তুমি দুরাচার, তথাপি তাহাকে ভক্তি করিলেই পবিত্র হইবে হে রাজেন্দ্র ! স্কুলের মঙ্গলার্থ—আমার কথামত কাজ কর।” দুষ্টাত্মা দশানন সেই মাল্যবানের কথিত হিত-বাক্য সহ করিতে > * > পারিল না; কেননা সে, কালের বশবর্তী হইয়াছিল। "দীন হীন মনুষ্য রামকে ক্ষমতাশালী বলিয়া মনে করিতেছ কেন ? কতকগুলি বানর তাহার আশ্রয় ; আর দ্বিতীয় সহায় নাই; পিতা, তাহাকে ত্যাগ করিয়াছে; এবং জন কএক তপস্বী তাহার প্রতি অনুগ্রহ করে ( এই ত ক্ষমতা ! ) । তুমি নিশ্চয়ই রামের প্রেরিত ; অনর্গল তাহাই স্তুতিবাদ করিতেছ ; ষাও তুমি বুদ্ধ হইয়াছ ; এবং আমার মাতামহ ; ( কি বলিব ) তোমার কথিত সকল বাক্যই সহ করিলাম, তোমার মুখ, নিঃস্বত এই বাক্য আমার শ্রবণপথ দগ্ধ করি. তেছে;” এই বলিয়া তখন রাবণ, সকল মন্ত্রিগণের সহিত সভাস্থল হইতে চলিয়া গেল। প্রাসাদশিখরে আসীন হইয়া বানরসেনাগণকে অবলোকন করত সমীপস্থিত রাঙ্কসদিগকে যুদ্ধ করিতে সজ্জিত হইতে বলিল। এ দিকুে* রাম, মন্ত্রি-পরিবেষ্টিত কিরীট-ধারী রাবণকে আসীন দেখিয়া অতীব ক্রুদ্ধ হইলেন। রাঘব, লক্ষ্মণের আনীত শরাসন গ্রহণ করিয়া অৰ্দ্ধচন্দ্রাকৃতি এক বাণ দ্বার নিমিযান্ধের মধ্যে সহস্ৰ শ্বেত-চ্ছত্র এবং দশট কিরাট ছেদন করিয়া ফেলিলেন। সে এক অদ্ভূত ব্যাপার হইয়া, ছিল। রাবণ লজ্জিত হইয়া সত্বর স্বীয় ভবনে প্রবেশ করিল ; অনস্তর খল রাবণ, প্রহস্ত প্রভৃতি সকল রাক্ষসগণকে আহ্বান করিয়া বানরদিগের সহিত যুদ্ধ করিতে সত্বর আদেশ করিল। অনন্তর, ভেরী, মৃদঙ্গ, পণব, ঢকা এবং গোমুখ প্রভৃতি রণবাদ্য বাজিয়া উঠিল। রাক্ষসগণ, মহিষ, উঃ, গৰ্দ্ধভ, সিংহ ও শার্দুল—এই সমস্ত বাহনে আরূঢ় এবং খড়গ, শূল, ধনু, পাশ, শ্রষ্টি, তোমর, শক্তি প্রভৃতি অন্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হইয়া লঙ্গার সকল ভাগ হইতে প্রত্যেক নগরদ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইল । রামচন্দ্র, তাহার পূর্ব্বেই বানরশ্রেষ্ঠদিগকে আজ্ঞ করিয়া রাখিয়াছিলেন; তাহারা পর্ব্বতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শৃঙ্গ ও বৃহৎ বৃহৎ শিখর উত্তোলিত করিয়া এবং নানাবিধ বৃক্ষশ্রেণী উৎপাটিত করিয়া যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করিতেছিল। (এখন) সেই বানর-যুথপতিগণ, দলে দলে বিভক্ত সেই সকল রাবণ-সৈন্ত অবলোকন করিয়া রাবণের প্রীতি-সাধন মানসে তখনই লঙ্কা আক্রমণ করিল। অনন্ত, সেই সমস্ত যুথপতি বানরগণ কেহ কেহ সহস্ৰ যুদ্ধ, কেহ কেহ কোটি যুথ, কেহ কেহ বা শত কোটি যুখে পরিবুত হইয়া বনস্পতিনিকর, পর্ব্বত শৃঙ্গ এবং মুষ্টি তুলিয় ভীষণভাবে নগরী অবরোধ করিল। প্লবঙ্গমগণ