পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> Ne দেশে কুণ্ডলাকারে অমৃত অবস্থিত আছে; আগ্নেয় অস্ত্রদ্বারা তাহ বিশোষিত করুন; তবে ইহার মৃত্যু হইবে" । বিভীষণের বাক্য শ্রবণ করিবামাত্র লীয়-পরাক্রম রাম , আগ্নেঃ অস্ত্র সন্ধান করিয়া সেই রাক্ষসের নাভি বিদ্ধ করিলেন ; অনস্তর ক্রুদ্ধ মহাবল রঘুবর, পুনর্ব্বার রাবণের মস্তক ও বাহু সকল ছেদন করিয়া ফেলিলেন । দশানন, ক্রোধবিহ্বল হইয়া বিভীষণকে বধ করিবার জন্ত ঘোরতর মহাশক্তি গ্রহণ পূর্ব্বক নিক্ষেপ করিল। রান্ধব, সুবর্ণ ভূষিত নিশিত-শর-নিকরে সেই শক্তি ছেদন করিয়া ফেলিলেন । তখন দশাননের মস্তকচ্ছেদ হওয়ায় তেজ নির্গত হইয় গেল ; ভয়ঙ্কর মস্তকসকল ছিন্ন হওয়ায় রাবণ মান-কাত্তি হইল । রাবণ, তখন অবশিষ্ট একমাত্র প্রধান মস্তক এবং দুই বাহুদ্বারা শোভূ পাইতে লাগিল। রাবণ ক্রুদ্ধ হইয়া রামের উপর পুনর্ব্বার নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্র বর্ষণ করিতে লাগিল ; এবং রামও তাহার উপর বাণ বৃষ্টি করিতে লাগিলেন । এইরূপে তথায় ঘোর তুমুল লোমহর্ষণ যুদ্ধ হইতে থাকিল । অনস্তর মাতলি, তখন রাখবকে স্মরণ করাইয় দিলেন ; বলিলেন ; হে রঘুবর ! ই হার বধের জন্তু সত্বর ব্রহ্মাক্স ত্যাগ করুন ; দেবগণ, যাহাকে ইহাঙ্গ বিনাশকাল বলিয়া কীর্ত্তন করেন, আজ তাহ উপস্থিত। হে রাঘব । আপনি ইহার মস্তক ছেদন করিবেন না ; প্রভু ! মস্তকে আঘাত করিলে ইহার বধ হইবে না, মর্ম্মে আঘাত করিলেই বধ হইবে " । মাতলির এই বাক্যে রামের স্মরণ হইল ; তখন তিনি নিশ্বসন্ত সৰ্পের ন্যায় প্রদীপ্ত শর গ্রহণ করিলেন । ঐ শরের পার্থে পবন ; ফলাতে স্থর্য্য ও অনল ; এবং শরীর আকাশময় ; উহা সুমেরু ও মন্দর পর্বতের ন্যায় গুরুতর ; সমুদয় পর্কে মহাতেজ লোকপাল সকল অবস্থিত ; মহা-বাহু বলী রাম, শরীর-প্রভায় জাহুল্যমান ভাস্কর-কিরণ-জালে প্রতিফলিত ত্রিলোকভয়াপহ সেই অদ্ভুত উগ্র-অস্ত্র-বেদোক্ত বিধি অনুসারে মন্ত্র-পুত •করিলেন, পরে সেই মহাশয় শাসনে যোজিত করিলেন রাঘব, যখন সেই শর-শ্রেষ্ঠ যোজনা বরেন, তখন সর্ব্বভূতগণ বিত্রস্ত ও বসুমতী কম্পিত হইল। তিনি রাবণের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া শরাসন আকর্ষণপূর্বক পদুম যত্ন সহকারে সেই মর্ম্মঘাতী অস্ত্র নিক্ষেপ কারলেন ইঙ্গ-নিক্ষিপ্ত বঞ্জের স্তায় সেই প্রচণ্ড বাণ বিকট-বদন কৃতাত্তের স্কায় রাবণের বক্ষঃস্থলে অধ্যাত্ম- রামায়ণ নিপতিত হইল। সেই শরীরনাশক ঘোরতর শর নিপতিত হইবামাত্র মহাবল রাবণের হৃদয় বিদীর্ণ করিল। (অনন্তর ) সেই শর রাবণের প্রাণ হরণ করিল ; রাবণ বধ করিয়া রসাতলে প্রবিষ্ট হইল ; আবার ঐরামের তৃণীর মধ্যে প্রবেশ করিল। মহৎ সশর শাসন রাবণের হস্ত হইতে অবিলম্বে খসিয়া পড়িল ; রাক্ষসরাজ, গতজীবন হইয়া ঘুরিতে ঘুরিতে বেগে ভূতলে পতিত হইল ; হতাবশিষ্ট রাক্ষসগণ, তাহাকে ভূতলে পতিত হইতে দেখিয়া নায়ক-নিধনে ভয়াকুল হওয়ায় সকল দিকে পলায়ন করিল । অনন্তর জয়োৎফুল্ল বানরগণ, দশাননের নিধন এবং রাস্ববের জয় দর্শন করিয়া অতীব আনন্দে রামজয় ও রাবণ-বধ । কীর্ত্তন করত সিংহনাদ করিতে লাগিল । তখন আকাশে মঙ্গলময় দেব দুন্দুভি নিনাদিত হইল । চতুর্দিক হইতে রাঘবের উপর পুষ্প-বৃষ্টি হইতে লাগিল। মুনি, সিদ্ধ চারণ ও দেবগণ, তাহার স্তব করিতে লাগিলেন ; এবং আকাশে সর্ব্বত্র অপব্ল - গণ আনন্দে নৃত্য করিত্বে লাগিল। দেবগণ দেখিতে থাকিলেন, স্থর্য্যতুল্য ভাস্বর জ্যোতিঃ, রাবণের দেহ হইতে উত্থিত হইয়ু বরে প্রবিষ্ট হইল দেবগণ বলিতে লাগিলেন, “ওঃ ! মহাত্মা রাবণের মহাভাগ্য! আমরা সত্ত্বগুণ প্রধান দেবগণ-বিষ্ণুর দয়ার পাত্র ; তথাপি আমাদিগের ভয়—দুঃখ— শোকাদি প্রচুর পরিমাণে আছে ; আমাদিগের সংসারে গতায়াত করিতে হয় ( মুক্তি লাভ করিতে পারি নাই ) । কিন্তু এই রাক্ষস-ক্রুর, ব্রহ্মঘাতী, অতীব তমোগুণ-সম্পন্ন, পরস্ত্রীতে আসক্ত, বিষ্ণু-দ্বেষক এবং তাপস-হিংসক ; তথাপি সে, সর্ব্বভূতের সমক্ষে রামচত্রে প্রবিষ্ট হইল!" দেবগণ এইরূপ বলিতে থাকলে । নারদ ঈষৎ হান্ত করিয়া কহিলেন;–“অহে দেবগণ ! তোমরা ধর্ম্মতত্ত্বে বিচক্ষণ ; এবিষয়ে একটা কথা শুন;—রাবণ, সর্ব্বদা রামের প্রতি দ্বেষবশতঃ ভূত্যগণের সহিত নিরস্তর দ্বেষক ভাবে রাম-চরিত্র শ্রবণ করিয়া সেই রামকেই মনে মনে ভাবনা করিত; রামের হস্তে আপনার নিধন হইবে জানিয়া ভয় ক্রমে সর্ব্বত্র রামকে দেখিতে পাইত ; প্রত্যহ স্বপ্নেও রামকেই দেখিত ; রামের প্রতি রাবণের ক্রোধও অবিলম্বে, গুরূপদেশ-জনিত জ্ঞান হইতে অধিক ফলজনক হইয়াছিল। রাবণ অবশেষে রামহস্তে নিহত হওয়ায় তাহার সমস্ত পাপরাশি বিনষ্ট হইল এবং বন্ধন-মুক্ত হইয়া রামসাযুজ্য প্রাপ্ত হইল। চুরাত্মাই হউক, আর পরধন