পাতা:অধ্যাপক - সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অধ্যাপক ○ অরণ্যানীর বনস্পতির মত, এই ধারণা নিয়ে তিনি ছেলেকে অযথা আশ্রয় বা অযথা প্রশ্রয় দিয়ে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেন নি । বুদ্ধিমান ছেলে বাপের দানের মর্য্যাদা রেখেছে। পরীক্ষাগুলিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এখন সায়েন্স কলেজে পড়ছে এম.এস.সি । মেয়েটির নাম স্বজাত । তারও পিতা নেই । তিনি অনেকদিন বর্ম্মা ও সিঙ্গাপুর অঞ্চলে কাঠের ব্যবসা করে বহুলক্ষের মালিক হয়ে রাওলপিণ্ডিতে বাস করতেন। স্বকুমারের পিতা রামনারায়ণ বাবুর বাড়ীর পাশেই ছিল তার বাড়ী । স্ত্রী-বিয়োগের পর থেকে কন্যাটিকে তিনি দুইদিক থেকে আক্রমণ করেছিলেন, একটি অতিলালন, আর একটি অতিশিক্ষা । সর্ব্বদাই স্বদেশী বিদেশী বিবিধ শিক্ষয়িত্রীরা স্বজাতার পিছনে লেগে থাকত। তার একমাত্র মুক্তির আনন্দ ছিল স্বকুমারের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া, থেলা করা ও গল্প করা । স্বজাতার পিতা হরিবল্লভ বাবু স্বকুমার ছেলেটিকে বেশ একটু ভালবাসতেন । সমস্ত ক্লাশের পরীক্ষায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দু’একটি পরীক্ষা দিয়েছিল তাতে সুকুমার প্রথম স্থানই অধিকার করেছিল । তার স্বভাব ছিল কোমল, অমায়িক ও বিনীত । তার চেহারা ছিল সুন্দর, দেহ ছিল বলিষ্ঠ, দৃঢ়। প্রভাতের শুকতারার ন্যায় তার দু’টি চোখ থাকত বুদ্ধির প্রেরণায় দীপ্ত হয়ে । তবু তার স্বভাবের কোথায় যেন ছিল একটা মেয়েলি ছাদ, সে যেন কখনও কাউকে কোনও বিষয়ে না বলতে পারত না । তার এই অমায়িক স্বভাবের জন্য গুরুজনেরা তার সকল সময়ই খুব স্থখ্যাতি করতেন যে এমন ছেলে আর হয় না । মোটা হাড় ও লোহার কাঠামোর মধ্যে কেমন করে যে স্থান পেয়েছিল একটি পেলব, নমনীয় ব্রততিবলয় তার খবর জানতেন তার বিধাতা-পুরুষ, আর কেউ নয়।