পাতা:অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SB অপরাজিত পাশের গ্রামে নামিয়া নৌকায় যাইতে হয়। অপর এ অঞ্চলে কখনও আসে নাই, সম্পণে অপরিচিত দেশ, নদীর ধারে সপ্যারির সারি, বাঁশ, বেত-বন, অসংখ্য নারিকেল গাছ । টিনের চালাওয়ালা গোলা গঞ্জ। অদ্ভুত ধরণের নাম, স্বরূপকাটি, যশাইকাটি । দক্ষিণ-পবি কোণ ও খাড়া পশ্চিম, দ’দিক হইতে প্রকাশড় দ’টা নদী আসিয়া পরস্পরকে ছাইয়া অর্ধচন্দ্রাকারে বকিয়া গিয়াছে, সেখানটাতে জলের রং ঈষৎ সবজি এবং এই সঙ্গমস্থানেরই ও-পারে আধ মাইলের মধ্যে প্রণবের মামার বাড়ির গ্রাম গঙ্গানন্দকাটি । ৮ নদীর ঘােট হইতে বাড়িটা অতি অলপ দরে । এ গ্রামের মধ্যে ইহারাই অবস্থাপন্ন সম্পন্দ্রান্ত গহস্থ । অনেকবার অপর এ ধরণের বাড়ির ছবি কল্পনা করিয়াছে, এই ধরণের বড় নদীর ধারে, শহর-বাজারের ছোঁয়াচ ও আবহাওয়া হইতে বহ, দারে, কোন এক অখ্যাত ক্ষীন্দ্র পাড়াগাঁয়ের সশস্ত্রান্ত গাহ, আগে অবস্থা ভাল ছিল, অথচ এখন নাই, নাটমন্দির, পাজার দালান, দোলমঞ্চ, রাসমণ্ট সবই থাকিবে, অথচ সে-সব হইবে ভাঙা, শ্রীহীন-আর থাকিবে প্রাচীন ধনী বংশের শ্রান্ত মযাদাবোধ, মানসম্মান, উদারতা। প্রণধের মামার বাড়ির সঙ্গে সব যেন হািবহ মিলিয়া গেল । ঘাট হইতে দাই সারি নারিকেল গাছ সোজা একেবারে বাড়ির দেউড়িতে গিন্না শেষ হইয়াছে, বাঁয়ে প্রকান্ড পাজার দালান, ডাইনে হলদে রঙের কলসী বসানো ফাটক ও ফুলবাগান, দোলমঞ্চ, রাসমণ8, নাটমন্দির । খািব জলস নাই কোনটারই, কানিস খসিয়া পড়িতেছে, একরাশ গোলাপায়রা নাটমন্দিরের মেজেতে চারিয়া বেড়াইতেছে, এক-আধটা ঝটপট করিয়া ছাদে উড়িয়া পলাইতেছে, একখানা ষোলবেহােরার সেকেলে হাঙরমাখো পালকি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়িয়া আছে ! দেখিয়া মনে হয়—এক সময় ইহাদের অবস্থা খব ভাল ছিল, বৰ্তমানে পসারহীন ডাস্তারের দ্বােব সংযত্ন অনাদত পিতলের পাতের মত শ্রীহীন ও মলিন । 'পল এসেছে, পল এসেছে'-'এই যে পল'-'এটি কে সঙ্গে ?’ ‘ও ! বেশ বেশ, স্টীমার কি আজ লেট ? ওরে নিবারণকে ডাক, ব্যাগটা বাড়ির মধ্যে নিম্নে যা, আহা থাক এসো এসো দীঘজীবী হও ।” প্রণব তাহাকে একেবারে বাড়ির মধ্যে লইয়া গেল । অপর অপরিচিত বাড়ির মধ্যে অন্দরমহলে যথারীতি অত্যন্ত লাজক মাখে ও সঙ্কোচের সহিত ঢুকিল । প্রণবের বড় মামমা আসিয়া কুশল-প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন । অপরকে দেখিয়া বলিলেন-এ ছেলেটিকে কোথেকে আনলি পােল ? এ মািখ যেন প্রণব হাসিয়া ঋলিল-কি ক’রে চিনবেন মামীম ? ও কি আর বাঙ্গাল দেশের মানষে 2 প্রণবের মামীিমা বলিলেন--তা নয় রে, কতবার পটে অকি ছবি দেখেছি, ঠাকুর দেবতার মাখের মত মাখ-এসো এসো দীঘজীবী হও প্রণবের দেখাদেখি অপও পায়ের ধলা লইয়া প্রণাম করিল। -এসো এসো, বাবা আমার এসো-কি সন্দির মখ-দেশ কোথায় বাবা ?