পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেখিল অপু দরজার বাম ধারের কবাটখানি সামনে ঠেলিয়া দিয়া তাহারই আড়ালে দাড়াইয়া নিঃশব্দে কঁদিতেছে। সে ছিচকাদুনে ছেলে নয়, বড় কিছুতেই সে কখনো কঁদে না-রাগ করে বটে, কিন্তু কঁদে না। দুৰ্গা বুঝিল আজ তাহার অত্যন্ত দুঃখ হইয়াছে, অতি সাধের ফলগুলি গেল। **তাহা ছাড়া আবার চোখে ধূলা দিয়া এরূপ অপমান করিল। অপুর কান্না সে সহ করিতে পারে না।--তাহার বুকের মধ্যে কেমন যেন করে। সে গিয়া ভাইয়ের হাত ধরিল—সাস্তুনার সুরে বলিল-কঁাদিস নে অপুআয় তোকে আমার সেই কড়িগুলো সব দিচ্চি-আয়-চোখে কি আর ব্যথা বাড়চে ?-“দেখি কাপড়খানা বুঝি ছিড়ে ফেলেচিস ? খাওয়া-দাওয়ার পর দুপুর-বেলা অপু কোথাও বাহির না হইয়া ঘরেই থাকে। অনেকদিনের জীর্ণ পুরাতন কোঠ-বাড়ীর পুরাতন ঘর । জিনিসপত্র, কাঠের সেকালের সিন্দুক, কটী রং-এর সেকালের বেতের প্যাটরা, কড়ির আলনা, জলচৌকিতে ঘর ভরানো। এমন সব বাক্স আছে যাহা অপু কখনো খুলিতে দেখে নাই, তাতে রক্ষিত এমন সব হাড়ি-কলসী আছে যাহার অভ্যস্তরন্থ দ্রব্য সম্বন্ধে সে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ! সব-সুদ্ধ মিলিয়া ঘরটিতে পুরানো জিনিষের কেমন একটা পুরানো পুরানো গন্ধ বাহির হয়।--সেটা কিসের গন্ধ সে জানে না, কিন্তু সেটা যেন বহু অতীত কথা মনে আনিয়া দেয়। সে অতীত দিনে অপু ছিল না, কিন্তু এই কড়ির আলনা ছিল, ঐ ঠাকুরদাদার বেতের ঝাঁপিটা ছিল, ঐ বড় কাঠের সিন্দুকটা ছিল, ওই যে সেঁন্দালি গাছের মাথা বনের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আছে, ওই পোড়ো জঙ্গলে-ভরা জায়গাটাতে কাহাদের চণ্ডীমণ্ডপ ছিল, আরও কত নামের কত ছেলেমেয়ে একদিন এই ভিটাতে খেলিস্যা বেড়াইত, কোথায় তারা ছায়া হইয়া মিলিয়া গিয়াছে, কতকাল আগে । যখন এক ঘরে থাকে, মা ঘুটে যায়-তখন তাতার অত্যন্ত লোভ হয়। ওই বাক্সট, বেতেব পাপিটা খুলিয়া দিনের আলোয় বাহির কমিয়া পরীক্ষা করিয়া দেখে কি অদ্ভুক্ত রহস্তে, উহাদের মধ্যে গুপ্ত আছে। ঘরের আড়ার সর্বোচ্চ তাকে কাঠের বড় বারকোসে যে তালপাতার পুথির স্তৃপ ও খাতাপত্র আছে, বাবাকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিতে পারিয়াছিল সেগুলি তাহার ঠাকুরদাদা রামচাদ তর্কালঙ্কারের-তাহার বড় ইচ্ছা ওষ্টগুলি যদি হাতের নাগালে ধরা দেয়, তবে সে একবার নীচে নামাইয়া নাড়িয়া চাড়িয়া দেখে । , এক একদিন বনের ধারে জানালাটায় বসিয়া দুপুর বেলা সে সেই ছেড়া কাশীপণাসের মহাভারতখানা লইয়া পড়ে, সে নিজেই খুব ভাল পড়িতে শিশিয়াছে, ፩ ቀኳ”