পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মধ্যে টিপ চিপ করে, মনে মনে ভাবে-আজ ভুলো আসবে না বোধ হয় দেখি দিকি কোথেকে আসে। আজ কি আর শুনতে পেয়েছে - হঠাৎ ঘন ঝোপে একটা শব্দ ওঠেচক্ষের নিমেষে বনজঙ্গলের লতা পাতা ছিাড়িয়া খুড়িয়া হঁপাইতে হাপাইতে ভুলো কোথা হইতে নক্ষত্রবেগে আসিয়া হাজির। অমনি দুর্গার সমস্ত গা দিয়া একটা কিসের স্রোত বহিয়া যায়। বিস্ময় ও কৌতুকে তাহার মুখ্য-চোখ উজ্জল দেখায়। মনে মনে ভাবে-ঠিক শুনতে পায় তো, আসে কোখেকে। আচ্ছা কাল একটু চুপি চুপি ডেকে দেখবো দিকি, তাও শুনতে পাবে ? এই আমোদ উপভোগ করিতে সে মায়ের বকুনি সহা করিয়াও রোজ খাইবার সময় নিজে বরং কিছু কম খাইয়া কুকুরের জন্য কিছু ভাত পাতে সঞ্চয় করিয়া রাখে । অপু কিন্তু দিদির কুকুর ডাকিবার মধ্যে কি আছে তাহা খুজিয়া পায় নাই । দিদির ওসাল মেয়েলি ব্যাপারের মধ্যে সে আসে নাই । অধীর আগ্রহে ভোজনরত শীর্ণ কুকুরটার দিকে সে চাহিয়াও দেখে না, শুধু শকুনির ডিমের কথা ভাবে । অবশেষে সন্ধান মিলিল। হীরু নাপিতের কঁঠালতলায় রাখালেরা গরু বাধিয়া গৃহস্থের বাড়ীতে তেল-তামাক আনিতে যায়। অপু গিয়া তাহাদের পাড়ার রাখালকে বলিল-তোরা কত মাঠে মাঠে বেড়াস, শকুনির বাসা দেখতে পাস ? আমাদের যদি একটা শকুনির ডিম এনে দিস আমি দুটো পয়সা দেবো। দিন চারেক পরেই রাখাল তাহাদের বাড়ীর সামনে আসিয়া তাহাকে ডাকিয়া কোমরের থলি হইতে দুইটা কালো রংএর ছোট ছোট ডিম বাহির করিয়া বলিল-এই দ্যাখ ঠাকুর এনেচি। অপু তাড়াতাড়ি হাত বাড়াইয়া বলিল, দেখি। পরে আহলাদের সহিত উন্টাইয়া পাণ্টাইয়া বলিল-শকুনির ডিম। ঠিক তো ? রাখাল সে সম্বন্ধে ভুরি ভুরি প্রমাণ উখাপিত করিল। ইহা শকুনির ডিম কিনা। এ সম্বন্ধে সন্দেহের কোন কারণ নাই, সে নিজের জীবন বিপন্ন করিয়া কোথাকার কোন উঁচু গাছের মগ ডাল হইতে ইহ সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছো-কিন্তু দুই আনার কমে দিবে না। পারিশ্রমিক শুনিয়া অপু অন্ধকার দেখিল। বলিল, দুটো পয়সা দেবো, আর আমার কড়িগুলো নিবি ? সব দিয়ে দেবো, এক টিনের ঠোঙা কড়ি-সব। এই এত বড় বড় সোনাৰ্গেটে-দেখবি ? দেখাবো ? S8