পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিয়া দুই-তিন খানা পত্র নীরোন্দ্রের পিতা রাজ্যেশ্বর বাবুর নিকট লিখিয়াছে। সেদিকের আশা সে এখনও ছাড়ে নাই। হরিহর বলে, তুমি কি খেপিলে না কি ? ওসকল বড় লোকের কাণ্ড, রাজ্যেশ্বর কাকা কি আর আমাদের পুছবেন ? তবুও সর্বজয়া ছাড়ে না ; বলে, লেখো না, আর একখানা লিখেই দ্যাখো না-নীরেন ত পছন্দই ক’রে গিয়েছে। দুই এক মাস চলিয়া যায়, বিশেষ কোন উত্তর আসে না, আবার সে স্বামীকে পত্র লিখিবার জন্য তাগাদ দিতে সুরু করে। এবার হরিহর যখন বিদেশে যায়, তখন বলিয়া গিয়াছে এইবার সে এখান হইতে উঠিয়া অন্যত্র বাস করিবার একটা কিছু ঠিক করিয়া আসিবেই। পাডার একপাশে নিকানো পুছানো ছোট্ট খড়ের ঘর দু’। তিন খানা। গোয়ালে হৃষ্টপুষ্ট দুগ্ধবতী গাভী বঁধা, মাচা ভরা বিচালী, গোলা ভরা ধান ! মাঠের ধারের মটর ক্ষেতের তাজা, সবুজ গন্ধ খোলা হাওয়ায় উঠান দিয়া বাহিয়া যায়। পাখী ডাকে-নীলকণ্ঠ, বাবুই, শ্যামা। অপু সকালে উঠিয়া বড় মাটির ভঁাড়ে-দোয় একপাত্র তাজা সফোন কালো গাইএর দুধের সঙ্গে গরম মুড়ির ফলার খাইয়া পড়িতে বসে। দুৰ্গা ম্যালেরিয়ায় ভোগে না । সকলেই জানে, সকলেই খাতির করে, আসিয়া পায়ের ধূলা লয়। গরীব বলিয়া কেহ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে না । -“শুধুই স্বপ্ন দেখে, দিন নাই, রাত নাই, সর্বজয়া শুধুই স্বপ্ন দেখে। তাহার মনে হয়, এতকাল পরে সত্য-সত্যই একটা কিছু লাগিয়া যাইবে । মনের মধ্যে কে যেন বলে । কেন এতদিন হয় নাই ? কেন এতকাল পরে ? সেই ছেলেবেলাকার দিনে জামতলায় সজনেতলায় ঘূরিবার সময় হইতে সেঁজুতির আলপনা আঁকার মন্ত্রের সঙ্গে এ সাধ যে তাহার মনে জড়াইয়া আছে, লক্ষ্মীর আলতা-পরা পায়ের দাগ আঁকা আঙিনায় শ্বশুর বাড়ীর ঘর-সংসার পাতাইবে । এরকম লোঙা পুরানো কোঠ বঁাশবন কে চাহিয়াছিল ? দুৰ্গা একটা ছোট মানকচু কোথা হইতে যোগাড় করিয়া আনিয়া রান্নাঘরে ধর্ণ দিয়া বসিয়া থাকে। তাহার মা বলে, তোর হোল কি সিগ গা ? আজি কি ব’লে ভাত খাবি ? কাল সন্ধ্যে বেলাও তো জর এসেছে ? দুৰ্গা পনে, তা হোক মা, সে জর বুঝি-একটু তো মোটে। শীত করলো?--তুমি এই মানকচুটা ভাতে দিয়ে দুটো ভীত-। তাহার মা বলে-যাঃ, অসুখ হোয়ে তোর খাই খাই বড় বেড়েছে। আজ কাল যদি ভাল থাকিস তো পরশু বরং দেবো । অনেক কাকুতি মিনতির পর না পারিয়া শেযে মানকচু তুলিয়া রাখিয়া y93