পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হরিহর মোটে পাঁচটা টাকা পাঠাইয়াছিল, তাহার পর আর পত্রও নাই, টাকাও নাই । সেই অনেক দিন হইয়া গেলা-রোজ সকালে উঠিয়া সর্বজয়া ভাবে আজ ঠিক খরচ আসবে। ছেলেকে বলে, তুই খেলে খেলে বেড়াস। ব’লে দেখতে পাসনে, ডাকবাক্সটার কাছে বসে থাকবি-পিওন যেমন আসবে। আর অমনি জিগ্যেস করবি অপু বলে-বা, আমি বুঝি বসে থাকি নে ? কালও তো এলো, পুটিদের চিঠি, আমাদের খবরের কাগজ দিয়ে গেল-জিগ্যেস করে এস দিকি পুটিকে ? কাল তবে আমাদের খবরের কাগজ কি ক’রে এল ? আমি থাকিনে বৈ কি ! বর্ষ রীতিমত নামিয়াছে। অপু মায়ের কথায় ঠােয় রায়েদের চণ্ডীমণ্ডপে পিওনের প্রত্যাশায় বসিয়া থাকে। সাধু কর্মকারের ঘরের চালা হইতে গোলা পায়রার দল ভিজিতে ভিজিতে ঝটপট করিয়া উড়িতে উড়িতে রায়েদের পশ্চিমের ঘরের কানিসে আসিতেছে, চাহিয়া চাহিয়া দ্যাখে । আকাশের ডাককে সে বড় ভয় করে। বিদ্যুৎ চমকাইলে মনে মনে ভাবে-দেবতা কি রকম নলপাচ্চে দেখচোঁ, এইবার ঠিক ডাকবে-পরে সে চোখ বুজিয়া কানে আঙুল দিয়া থাকে । বাড়ী ফিরিয়া দ্যাখে মা ও দিদি সারা বিকাল ভিজিতে ভিজিতে রাশীকৃত কচুর শাক তুলিয়া রান্নাঘরের দাওয়ায় জড়ো করিয়াছে। অপু বলে-কোথেকে আনলে মা ? উঃ কত! দুৰ্গা হাসিয়া বলে-কত- উ-উঃ! তোমার তো ব’সে ব’সে বড় সুবিধে। ওই ওদের ডোবার জামতলা থেকে-এই এতটা এক হাটু জল । যাও দিকি ? সকালে ঘাটে গিয়া নাপিত বৌয়ের সঙ্গে দেখা হয় । সর্বজয় কাপড়ের ভিতর হইতে কঁাসার একখানা রেকাৰী বাহির করিয়া বলে, এই দ্যাখো জিনিসখানা, খুব ভালো-ভরণ না, কিছু না, ফুল কাসা। তুমি বলেছিলে, তাই বলি যাই নিয়ে-এ সে জিনিস নয়, এ আমার বিয়ের দান-এখন এ জিনিস আর মেলে না অনেক দরদস্তুরের পর নাপিত-বীে নগদ একটি আধুলি আঁচল হইতে খুলিয়া দিয়া রোকাবিখানা কাপড়ের মধ্যে লুকাইয়া লয়। কাউকে যেন না প্রকাশ করে-সর্বজয়া এ অনুরোধ বার বার করে। দুই একদিনে ঘনীভূত বৰ্ষা নামিল। হু-হু পূবে হাওয়া, খানাডোবা সব থৈ-থৈ করিতেছে-পথে ঘাটে একহঁাটু জল, দিন রাত সো সেঁ, বাশবনে ঝড় বাধে-বঁশের মাথা মাটিতে লুটাইয়া পড়ে-আকাশের কোথাও কাক እዓ8