পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাই-মাঝে মাঝে আগেকার চেয়েও অন্ধকার করিয়া আসোঁ-কালো কালো মেঘের রাশ হু-হু উড়িয়া পূর্ব হইতে পশ্চিমে চলিয়াছে-দূর আকাশের কোথায় যেন দেবাম্বরের মহাসংগ্রাম বাধিয়াছে, কোন কৌশলী সেনানায়কের চালনায় জলস্থল-আকাশ একেবারে ছাইয়া ফেলিয়া বিরাট দৈত্য-সৈন্য, বাহিনীর পর বাহিনী, অক্ষৌহিণীর পর অক্ষৌহিণী, অদৃশ্য রখী মহারথীদের নায়কত্বে ঝড়ের বেগে অগ্রসর হইতেছে-প্রজ্বলন্ত অতুগ্র দেববাজ আগুন উড়াইয়া চক্ষের নিমেষে। বিশাল কৃষ্ণচমূর এদিকৃ-ওদিকৃ পর্যন্ত ছিাড়িয়া ফাড়িয়া এই ছিন্ন ভিন্ন করিয়া দিতেছে-এই আবার কোথা হইতে রক্তবীজের বংশ করাল কৃষ্ণছায়ায় পৃথিবী অন্তরীক্ষ অন্ধকার করিয়া ঘিরিয়া আসিতেছে। মহাঝড় ! দিন রাত সেঁ-সো শব্দ-নদীর জল বাড়ে-কত ঘরদের কত জায়গায় যে পড়িয়া গেল ! • • •নদী-নালা জলে ভাসিয়া গিয়াছে-গরু-বাছুর গাছের তলে, বঁাশবনে, বাড়ীর ছাচতলায় অঝোরে দাড়াইয়া ভিজিতেছে, পাখী-পাখালির শব্দ নাই কোনোদিকে ! চার পাচদিন সমান ভাবে কাটিল--কেবল ঝড়ের শব্দ আর অবিশ্রান্ত ধারা বর্ষণ ! অপু দাওয়ায় উঠিয়া তাড়াতাড়ি ভিজা মাথা মুছিতে মুছিতে বলিল-আমাদের বাঁশতলায় জল এসেছে দিদি, দেখবি ? দুৰ্গা কঁথা মুড়ি দিয়া শুইয়াছিল--না উঠিয়াই বলিল-কতখানি জল এসেচে রে ? অপু বলে, তোর উত্তর সারলে কাল দেখে আসিস। তেঁতুলতলার পথে হাটু জল! জিজ্ঞাসা করে-মা কোথায় রে ? ঘরে একটা দানা নেই।--দুটোখানি বাসি চালভাজা মাত্র আছে। অপু কান্নাকাটি করে,-তা হবে না। মা, খিদে পায় না বুঝি-আমি দুটি ভাত খাবো-হু-উ- তার মা বলিল, লক্ষ্মী মাণিক আমার-এ রকম কি করে । অনেক ক’রে চালভাজা মেখে দেবো এখন-রাধবো কেমন ক’রে, দেখচিস নে কি রকম সেঁওটা করেচে ? উনুনের মধ্যে এক উনুন জল যে ? পরে সে কাপড়ের ভিতর হইতে একটা কি বাহির করিয়া হাসিমুখে দেখাইয়া বলে-এই দ্যাখে একটা কইমাছ, বঁাশতলায় কানে হেঁটে দেখি বেড়াচে-বন্যের জল পেয়ে সব উঠে আসছে গাঙ থেকে-বরোজ পোতার ডোবা ভেসে নদীর সঙ্গে এক হ’য়ে গিয়েচে কি না। তাই সব উঠে আসচে দুৰ্গা কঁথা ফেলিয় ওঠে-অবাক হইয়া যায়। বলে, দেখি মা মাছটা ? হ্যা মা, কইমাছ বুঝি কানে হেঁটে বেড়ায় ? আর আছে ? অপু এখনি বৃষ্টিমাথায় ছটিয়া যায় আর কি-অনেক কষ্টে তাহার মা তাহাকে থামায়। She