পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে থালা তুলিয়া চলিয়া যাইবার সময় একটু ইতস্ততঃ করিয়া বলিলরাণুদি, তোমাদের এই পশ্চিমের ঘরের আলমারিতে যে বইগুলো আছে সত্যুদা পড়তে দেয় না। একখানা দেবে পড়তে ? পড়েই দিয়ে যাব । রাণী বলিল-কোন বই আমি তো জানিমে, দাড়া আমি দেখছি।-- সতু প্রথমে কিছুতেই রাজী হয় না, অবশেষে বলিল-আচ্ছা পড়তে দিই, যদি এক কাজ করিস। আমাদের মাঠের পুকুরে রোজ মাছ চুরি যাচ্ছেজ্যাঠামশায় আমাকে বলেছে, সেখানে গিয়ে দুপুর বেলা চৌকি দিতে,-আমার সেখানে একা এক ভালো লাগে না, তুই যদি যাস আমার বদলে তবে বই পড়তে দেবে রাণী প্রতিবাদ করিয়া বলিল,-বেশ তো ? ও ছেলেমানুষ সেই বনের মধ্যে ব’সে মাছ চৌকি দেবে বৈকি ? তুমি বুডো ছেলে পারো না, আর ও যাবে ? যাও তোমায় বই দিতে হবে না, আমি বাবার কাছে চেয়ে দেবো।-- অপু কিন্তু রাজী হইল। রাণীর বাবা ভুবন মুখুয্যে বিদেশে থাকেন, তাহার আসিবার অনেক দেরি অথচ এই বইগুলোর উপর তাহার বড লোভ। এগুলি পডিবার লোভে সে কতদিন লুক্কচিত্তে সতুদের পশ্চিমেব ঘরটায় যাতায়াত করিয়াছে। দু-একখানা একটু আধটু পড়িয়াছেও। কিন্তু সন্তু নিজে তো পড়েই না, কাহাকেও পড়িতে দেয় না। নায়কের ঠিক সঙ্কটময় মুহুর্তটিতে হাত হইতে বই কাডিয়া লইয়া বলে-রেখে দে অপু, এ ছোট কাকার বই, ছিড়ে যাবে, দে । অপু হাতে স্বৰ্গ পাইয়া গেল। প্রতিদিন দুপুরবেলা আলমারী হইতে বাছিয়া একখানি করিয়া বই সতুর নিকট হইতে চাহিয়া লইয়া যায় ও বঁাশবনের ছায়ায় কতকগুলো সেওড়াগাছের কাচা ডাল পাতিয়া তাহার উপর উপুড় হইয়া শুইয়া একমনে পড়ে। বই অনেক আছে - ‘প্রণয়-প্রতিমা, সরোজ-সরোজিনী, কুসুম-কুমারী, সচিত্র যৌবনেযোগিনী নাটক, দস্য-দুহিতা, প্রেম-পরিণাম বা অমৃতে গরল, গোপেশ্বরের গুপ্তকথা • • • • • •সে কত নাম করিবে । এক-একখানি করিয়া সে ধরে, শেষ না করিয়া আর ছাড়িতে পারে না । চোখ টাটাইয়া ওঠে, রাগ টিপ টপ করে ; পুকুরধারে নির্জন বঁাশবনের ছায়া ইতিমধ্যে কখন দীর্ঘ হইয়া মজা পুকুরটার পাট-শেওলার দামে নামিয়া আসে, তাহার খেয়ালই থাকে না কোনদিক দিয়া বেলা গেল । - কি গল্প। সরোজিনীকে সঙ্গে লইয়া সরোজ নৌকাযোগে মুর্শিদাবাদে যাইতেছেন, পথে নবাবের হুকুমে সরোজের হইয়া গেল প্রাণদণ্ড, সরোজিনীকে একটা অন্ধকার ঘরে চাবিতালা বন্ধ করিয়া রাখিয়া দিল । গভীর রাত্রে কক্ষেয় w-59