পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেশের পল্লীতে সচরাচর চোখে পড়ে না । বাপ-মায়ের কথাবার্তায় আজ সে শুনিয়াছে তাহার স্বামী পশ্চিম হইতে নাকি খুব লেখাপড়া শিখিয়া আসিয়াছে, টাকাকড়ির দিক হইতেও দু’পয়সা না আনিয়াছে এমন নয়। এতদিনে তাহার দুঃখ ঘুচিল, ভগবান বোধহয় এতদিনে মুখ তুলিয়া চাহিয়াছেন। সকলেই বলিত স্বামী তাহার সন্ন্যাসী হইয়া গিয়াছে,--আর কখনো ফিরিবে না । মনে-প্রাণে একথা বিশ্বাস না করিলেও স্বামীর পুনরাগমন এতকাল তাহার কাছে দুরাশার মতই ঠেকিয়াছে। কত রাত্রি দুশ্চিন্তায় জাগিয়া কাটাইয়াছে, গ্রামের বিবাহ উপনয়ন উৎসবে ভাল করিয়া যোগ দিতে পারে নাই,--সকলেই আহা বলে, গায়ে পড়িয়া সহানুভূতি জানায় ; অভিমানে তাহার চোখে জল আসিতঅনাবিল যৌবনের সোনালী কল্পনা এতদিন শুধু আড়ালে আবডালে নির্জন রাত্রিতে চোখের জলে ঝরিয়া পড়িয়াছে, কাহারও কাছে মুখ ফুটিয়া প্রকাশ করে নাই, কিন্তু বসিয়া বসিয়া কতদিন ভাবিত-এই তো সংসারের অবস্থা, যদি সত্যসত্যই স্বামী ফিরিয়া না আসে, তবে বাপ-মায়ের মৃত্যুর পরে কোথায় দাড়াইবে-কে আশ্রয় দিবে ? এতদিনে কিনারা মিলিল । হরিহর হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল-আচ্ছা, আমাকে যখন তুমি ওবেলা দরজার লাইরে দেখলে-তখন চিনতে পেরেছিলে ? সত্যি কথা বোলো কিন্তু সর্বজয়া হাসিয়া বলিল-না, তা চিনবাে কেন! প্রথমটা ঠিক বুঝতে পারিনি, তারপর তখুনি उन्नि८-- আন্দাজে নয় গো, আন্দাজে নয়—সত্যি-সত্যি। দেখলে না, তখখনি মাথায় কাপড় দিয়ে বাড়ীর মধ্যে ঢুকলাম ? তারপর একটু চুপ করিয়া থাকিয়া আবার জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছা, তুমি বলতো, আমায় চিনতে পেরেছিলে ? বল তো গা ছুয়ে ? নানা কেজো-অকেজো কথাবার্তায় রাত বাডিতে লাগিল। পরলোকগত দাদার কথা উঠতে সৰ্বজয়ার চোখের জল আর বঁধি মানে না হরিহর জিজ্ঞাসা করিল-বীণার বিয়ে কোথায় হ’ল ? ছোট শালীর নাম জানিত না, আজই। শ্বশুরের মুখে শুনিয়াছে । তার বিয়ে হোল কুডুলে বিনোদপুর-ওই যে বড় গাঙ, কি বলে ? মধুমতী ।-সেই মধুমতীর ধারে একটা প্রশ্ন বারবার সর্বজয়ার মনে আসিতে লাগিল-স্বামী তাহাকে লইয়া যাইবে তো ? না, দেখাশুনা করিয়া আবার চলিয়া যাইবে সেই কাশী গয়া ? ܘ ܪ