পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলি বলি করিয়াও মুখ ফুটিয়া সে কথাটা কিন্তু কোনরূপেই জিজ্ঞাসা করিতে পারিল না।--তাহার মনের ভিতর কে যেন বিদ্রোহ ঘোষণা করিয়া বলিল-না নিয়ে যাকৃ গে-আবার তা নিয়ে বলা, কেন এত ছোট হতে যাওয়া ? হরিহর সমস্যার সমাধান নিজ হইতেই করিল। বলিল-কাল চল তোমাকে বাড়ী নিয়ে যাই-নিশ্চিন্দিপুরে সর্বজয়ার বুকে ধডাস করিয়া যেন ঢোকার পাড় পডিল-সামলাইয়া লইয়া মুখে বলিল-কালই কেন ? এ্যাদিন পরে এলে-দুদিন থাকো না কেন ?-- বাবা মা কি তোমায় এখুনি ছেডে দেবেন ? পরশু আবার আমার বকুলফুলের বাড়ী তোমায় নেমস্তন্ন করে গিয়েছে -কে তোমার বকুলফুল ?-- -এই গায়েই বাড়ী-এ-পাড়ায়, আবার ও-পান্ডাতে বিয়ে হয়েচে । পবে সে আবার হাসিয়া বলিল, কাল সকালে তোমাকে দেখতে আসবে বলেচে যেকথাবার্তার স্রোত একভাবেই চলিল-রাত্রি গভীর হইল। বাড়ীর ধারেই সজনে গাছে রাতিজাগা পাখী অদ্ভুত রব করিয়া ডাকিতেছিল। হরিহরের মনে হইল বাংলার এই নিভৃত পল্লীপ্রান্তের বঁাশবনের ছায়ায় একখানি স্নেহ-ব্যগ্র গৃহকোণ যখন তাহার আগমনের আশায় মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর অভ্যর্থনা-সজ্জা সাজাইয়া বৃথা প্রতীক্ষা করিয়াছে, কিসের সন্ধানেই সে তখন পশ্চিমের অনুর্বর অপরিচিত মরু-পাহাডের ফঁাকে ফঁাকে গৃহহীন নিরাশ্রয়ের ন্যায় ঘূরিয়া মরিতেছিল যে । রাতিজাগা পাখীটা একঘেযে ডাকিতেছিল, বাহিবের জ্যোৎসু ক্রমে ক্রমে মান হইয়া আসিতেছে। এক হিসাবে এই রাত্রি তাহার কাছে বড় রহস্যময় ঠেকিতেছিল, সম্মুখে তাহাদের নবজীবনের যে পথ বিস্তীর্ণ ভবিষ্যতে চলিয়া গোল —আজ রাতটি হইতেই তাহার সুরু । কে জানে সে জীবন কেমন হইবে ! কে জানে জীবন-লক্ষ্মী কোন সাজি সাজাইয়া রাখিয়াছেন তাহাদের সে অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের পাথেয়রূপে ? দুইজনেরই মনে বোধ হয় অনেকটা অস্পষ্টরূপে একই ভাব জাগিতেছিল। দুইজনেই চুপ করিয়া জানালার বাহিরের ফঁাকে জ্যোৎস্নারাত্রির দিকে চাহিয়া রহিল । তার পর কতদিন কাটিয়া গিয়াছে ? তখন কোথায় ছিল এই শিশুর পাত্তা ? RN