পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিমন্ত্রিতাদের মধ্যে কাহারও দিকে হাসিমুখে বলিতেছে-বা বেশ তো মণি-দি ? একেবারে রাত আটটা কোরে ? বকুলবাগানের বৌদি এলেন না ? অভ্যর্থতা সুন্দরী হাসিয়া বলিলেন-গাড়ী সাজিয়ে ব’সে আছি বেলা ছটা থেকে-বেরুনো তো সোজা নয়। ভাই, সব তৈরী না হোলে তো-জানোই তো সব সুজাত কাঞ্চনফুল রংএর দামী চায়না ক্রেপের হাতকাটা জামার ফাক দিয়া বাহির হওয়া শুভ্র, সুগোল, নিটোল বাহু দিয়া পিছন হইতে নিমন্ত্রিতাকে বেষ্টন করিয়া আদরের ধরণে র্তাহার ডান কঁাধে মুখ রাখিয়া একসঙ্গে উপরে উঠিতে লাগিল। বলিতে বলিতে চলিল-মা বলছিলেন বকুলবাগানের বৌদি নাকি সামনের মাসে যাবেন কলকাতা-বুধবারে মা গেছলেন যে-ঠিক কিছু হোল ? সিডির উপরের ধাপে মেজ বৌ-রাণী দেখা দিলেন। বয়স একটু বেশী, বোধ হয় ত্রিশের উপর, অপূর্ব সুন্দরী। তার বেশের কোন বাহুল্য নাই, ফিকে চাপারঙের চাওড়া লালপাড় রেশমী শাড়ীর প্রান্ত মাথার চুলে হীরার ক্লিপ দিয়া আঁটা, সিড়ির বড় ঝাড়ের আলোয় গলার সরু সোনার চেন চিক্‌ চিকু করিতেছে, সুন্দর গড়ন, একটু ধীর, গম্ভীর—এই বয়সেও দুধে-আলত রংএর আভা অপূর্ব। মাস খানেক হইল উপযুক্ত ভাই মারা যাওয়াতে একটুখানি বিষাদের ছায়া পরিণত মুখের সৌন্দর্যকে একটি সংযত শ্রী দান করিয়াছে। মণি-দি উঠিতে উঠতে মেজ বেী-রাণীকে সম্মুখে দেখিয়া সিড়ির উপরেই দাড়াইয়া গেলেন-মেজ বৌদির শরীর আজকাল কেমন আছে ? এই দেখুন না, একবার আসবো আসবো ক’রে-কাল ওঁরা এটোয়া থেকে সব এলেন, তাই নিয়ে অনেক রাত অবধি এত সুন্দর দেখিতে মানুষ হয়, অপুর এ ধারণা ছিল না। অপু। ইহাকে এই প্রথম দেখিল কারণ ইনি এতদিন এখানে ছিলেন না, ভাইয়ের মৃত্যুর পর সবে দিনকয়েক হইল বাপের বাড়ী হইতে আসিয়াছেন-সে মুগ্ধ চোখে আপলক বিস্ময়ের দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। এই আলো, চারিধারে সুন্দরীর মেলা, দামী পুষ্পসারের মৃদু মনমাতানো সৌরভ, বীণার ঝঙ্কারের মত সুর ও হাসির লহরীতে তাহার কেমন এক নেশা জমিয়া গেল। এই যদি সারাদিন চলে ? মেজ বৌ-রাণী অনেকক্ষণ হইতেই দেখিতেছিলেন সিড়ির কোণে কে একজন অপরিচিত ছেলে দাড়াইয়া আছে। সকলকে তিনি জানেন না-ৰ্তাহার বাপও খুব বড় লোক, প্রায়ই বাপের বাড়ী থাকেন। দু-ধাপ নামিয়া আসিয়া মৃদু কণ্ঠে ডাকিয়া বলিলেন-খোকা উঠে এস। দাড়িয়ে কেন ? তুমি কোখেকে আসছে ? W-S 发歌鸣,