পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুপী কবরেজ বলেছে ময়ূরপুচ্ছ পুড়িয়ে মধু দিয়ে খাওয়াতে। তাই কি সোজাসুজি পুড়লে হবে মা, চৌষট্টি ফৈজৎ-কঁাসার ঘােটর মধ্যে পোরে, তা ঘুটের জাল করে, তা টিমে আঁচে চড়াও। হ্যারে হাজরী, ভেঁাদা গোয়াড়ী থেকে কাল মধু এসেছে কি-না জানিস ? আঠারো উনিশ বছরের একটি মেয়ে ঘাড় নাড়িয়া কথার উত্তর দিবার পূর্বেই তেলি-গিয়ী তাহাকে দেখাইয়া বলিল, ওইটি আমার মেজ মেয়েবহরমপুরে বিয়ে দিয়েচি। জামাই বড়বাজারে এদের দোকানে কাজকর্ম করেন। নিজেদেরও গোলা, দোকান রয়েচে কালনা-বেয়াই সেখানে দেখেন শোনেন। কিন্তু হলে হবে কি মা-এমন কথা ভূভারতে কেউ কখনো শোনে নি। দুই ছেলে, নাতি নাতনী, বেয়ান মারা গেলেন ভাদর মাসে, মাঘ মাসে বুড়ো আবার বিয়ে ক’রে আনলে। এখন ছেলেদের সব দিয়েচে ভেন্ন করে। জামাইয়ের মুশকিল, ছেলেমানুষ-ত উনি বলেচেন, তা এখন তুমি বাবা আমাদের দোকানেই থাকো, কাজ দেখা শোনা শেখো, ব্যবসাদারের ছেলে, তারপর একটা হিল্পে লাগিয়ে দেওয়া যাবে। বড় পুত্রবধু এতক্ষণ কথা বলে নাই। সে ইহাদের মত হুড বানিস নয়, বেশ টকটকে রং । বোধ হয় শহর অঞ্চলের মেয়ে। এ দলের মধ্যে সেই সুন্দরী, বয়স বাইশ-তেইশ হইবে। সে নীচের ঠোঁটের কেমন চমৎকার এক প্রকার ভঙ্গি করিয়া বলিল, এরা এসেচেন সারাদিন খাওয়া-দাওয়া হয় নি, এদের আজকের সব ব্যবস্থা তো করে দিতে হবে ? বেলাও তো গিয়েছে, এরা আবার রান্না করবেন । এই সময় অপু বাডির উঠানে ঢুকিল। সে আসিয়াই গ্রামখানা বেড়াইয়া দেখিতে বাহিরে গিয়াছিল। তেলি গিনী বলিল-কে মা-ঠাকরুণ ? ছেলে বুঝি ? এই এক ছেলে ? বাৰু, চেহারা যেন রাজপুত্তর। সকলেরই চোখ তাহার উপর পড়িল। অপু উঠানে ঢুকিয়াই এতগুলি অপরিচিতের সম্মুখে পডিয়া কিছু লজ্জিত ও সঙ্কুচিত হইয়া উঠিল। পাশ কাটাইয়া ঘরের মধ্যে ঢুকিতেছিল, তাহার মা বলিল, দাড়া না। এখেনে। ভারি লাজুক ছেলে মা-এখন ওইটুকুতে দাড়িয়েছে—আর এক মেয়ে ছিল, তাসর্বজয়ার গলার স্বর ভারী হইয়া আসিল। গিনী ও বড় পুত্রবধু একসঙ্গে বলিল, নেই, হঁ্যা মা ? সর্বজয়া বলিল, সে কি মেয়ে মা ! আমায় ছলতে এসেছিল, কি চুল, কি চােখ, কি মিষ্টি কথা ? বকেশ্বকো, গাল দাও, মা’র মুখে উচু কথাটি কেউ শোনে নি কোন দিন। ছোটবোঁ বলিল, কত বয়সে গেল মা ? so