পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাহির হইয়া পড়িত - বৈকালের ছায়ায় চ্যাঙ তাল-খেজুরগাছগুলা যেন দিগন্তের আকাশ ছুইতে চাহিতেছে—পিড়িং পিড়িং পাখির ডাক-হু-হু মাঠের হাওয়ায় পাক ফসলের গন্ধ আনিতেছে-সর্বত্র একটা মুক্তি, একটা আনন্দের বার্তা • • • কিন্তু সর্বাপেক্ষা সে আনন্দ পাইত পথ-চলতি লোকজনের সঙ্গে কথা কহিয়া । কত ধরণের লোকের সঙ্গে পথে দেখা হইত-কত দূর-গ্রামের লোক পথ দিয়া হাটিত, কত দেশের লোক কত দেশে যাইত। অপু সবেমাত্র এক পথে বাহির হইয়াছে, বাহিরের পৃথিবীটার সহিত নতুন ভাবে পরিচয় হইতেছে, পথে ঘাটে সকলের সঙ্গে, আলাপ করিয়া তাহদের কথা জানিতে তাহার প্রবল আগ্রহ। পথ চলিবার সময়টা এইজন্য বড় ভালো লাগে, সাগ্রহে সে ইহার প্রতীক্ষা করে, স্কলের ছুটির পর পথে নামিয়াই ভাবে-এইবার গল্প শুনবো । পরে ক্ষিপ্রপদে আগাইয়া আসিয়া কোনো অপরিচিত লোকের নাগল ধরিয়া ফেলে। প্রায়ই চাষালোক, হাতে হুকোকন্ধে। অপু জিজ্ঞাসা করে-কোথায় যাচ্ছি, হঁ্যা কাক ? চলো আমি মনসাপোতা পর্যন্ত তোমার সঙ্গে যাবে। মামজোয়ান গিইছিলে ? তোমাদের বাডি বুঝি ? না ? শিকৃডে ? নাম শুনেচি, কোনদিকে জানি নে। কি খেয়ে সকালে বেরিয়েচে, হ্যা কাক ?-- তারপর সে নানা খুঁটিনাটি কথা জিজ্ঞাসা করে-কেমন সে গ্রাম, ক’ঘর লোকের বাস, কোন নদীর ধারে ? ক’জন লোক তাদের বাডি, কত ছেলেমেয়ে, তারা কি করে ?-- কত গল্প, কত গ্রামের কিংবদন্তী, সেকাল-একালের কত কথা, পল্লীগৃহস্থের কত সুখদুঃখের কাহিনী-সে। শুনিয়াছিল। এই এক বৎসরে। সে চিরদিন গল্পপাগলা, গল্প শুনিতে শুনিতে আহার-নিদ্রা ভুলিয়া যায়-যন্ত সামান্য ঘটনাই হোক, তাহার ভাল লাগে। একটা ঘটনা মনে কি গভীর রেখাপাতই করিয়াছিল। কোন গ্রামের এক ব্রাহ্মণবাডির বেী এক বাগদীর সঙ্গে কুলের বাহির হইয়া গিয়াছিল—আজি অপুর সঙ্গীটি এইমাত্র শামুকপোতার বিলে গুগলি তুলিতে দেখিয়া আসিয়াছে। পরণে ছেড়া কাপড়, গায়ে গহনা নাই, ডাঙায় একটি ছোট ছেলে বসিয়া আছে, বোধ হয় তাহারই । অপু আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, তোমার দেশের মেয়ে ? তোমায় চিনতে পারলে ? হঁ্যা, চিনিতে পারিয়াছিল। কত কঁাদিল, চোখের জল ফেলিল, বাপ-মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করিল। অনুরোধ করিল যেন এসব কথা দেশে গিয়া সে না। বলে। বাপ-মা শুনিয়া কষ্ট পাইবে । সে বেশ সুখে আছে। কপালে যাহা ছিল, তাহাই হইয়াছে। RR