পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঙ্গীটি উপসংহারে বলিল, বামুন-বাড়ির বেী, হর্তেলের মত গায়ের রঙযেন ঠাকুরুণের পিরুতিমে ! দুর্গ-প্রতিমার মত রূপসী একটি গৃহস্থবধু ছেড়া কাপড় পরণে শামুকপোতার বিলে হাটুজল ভাঙিয়া চুপড়ি হাতে গুগলি তুলিতেছে-কত কাল ছবিটা তাহাব মানে ছিল । সেদিন সে স্কুলে গিয়া দেখিল স্বলসুদ্ধ লোক বেজায় সন্ত্রস্ত ! মাস্টারেরা এদিক ওদিক চুটাছুটি করিতেছেন। স্থল-ঘর সবই ফুলের মালা দিয়া সাজানো হইতেছে, তৃতীয় পণ্ডিত মহাশয় খামোকো একটা সুবৃহৎ সিড়িভাঙা ভগ্নাংশ কষিয়া নিজের ক্লাসের বোর্ড পুরাইয়া রাখিয়াছেন। হঠাই আজ স্কুল ঘরের বারান্দা ও কম্পাউণ্ড এত সাফ করিয়া রাখা হইয়েেছ যে, যাহারা বারোমাস এস্থানের সহিত পরিচিত, তাহদের বিস্মিত হইবার কথা । হেডমাস্টার ফণীবাবু খাতাপত্র, এ্যাডমিশন বুক, শিক্ষকগণের হাজিয়া বই লইয়া মহা ব্যস্ত। সেকেণ্ড পণ্ডিতকে ডাকিয়া বলিলেন, ও অমূল্যবাবু, চৌঠে তারিখে খাতায় যে নাম সই করেন নি ? আপনাকে ব’লে ব’লে আর পারা গেল না । দেরিতে এসেছিলেন তো খাতায় সই ক’রে ক্লাসে গেলেই হ’ত ? সব মনে থাকে, এইটের বেলাতেই অপু শুনিল একটার সময় ইন্সপেক্টর আসিবেন স্কল দেখিতে। ইন্সপেক্টর আসিলে কি করিয়া উঠিয়া দাডাইয়া তাহাকে অভ্যর্থনা করিতে হইবে, তৃতীয় পণ্ডিত মহাশয় ক্লাশের ছেলেদের সে বিষয়ে তালিম দিতে লাগিলেন । বারোটার কিছু পূর্বে একখানা ঘোড়ার গাড়ি আসিয়া স্কলের সমনে থামিল । হেডমাস্টার তখনও ফাইল দুরন্ত শেষ করিয়া উঠিতে পারেন নাই বোধ হয়-তিনি এত সকালে ইন্সপেক্টর আসিয়া পড়াটা প্রত্যাশা করেন। নাই, জানাল দিয়া উকি মারিয়া গাড়ি দেখিতে পাইয়াই উঠি-পডি অবস্থায় ছুটিলেন। তৃতীয় পণ্ডিত মহাশয় হঠাৎ তড়িৎ-পৃষ্ট ভেকের মত সজীব হইয়া উঠিয়া তার স্বরে ও মহা উৎসাহে। ( অন্যদিন এই সময়টাই তিনি ক্লাসে বসিয়া মধ্যাহিক নিদ্রাটুকু উপভোগ করিয়া থাকেন ) দ্রব পদার্থ কাহাকে বলে তাহার বর্ণনা আরম্ভ করিলেন। পাশের ঘরে সেকেণ্ড পণ্ডিত মহাশয়ের হু কোর শব্দ অদ্ভুত ক্ষিপ্রতার সহিত বন্ধ হইয়া গেল। সঙ্গে সঙ্গে তাহার উচ্চকণ্ঠ শোনা যাইতে লাগিল। শিক্ষক বলিলেন, মতি, তোমরা অবশ্যই কমলালেবু দেখিয়াছ, পৃথিবীর আকার-এই হরেন-কমলালেবুর ন্যায় গোলাকার হেডমাস্টারের পিছনে পিছনে ইন্সপেক্টর ঘরে ঢুকিলেন। বয়স চল্লিশবিয়াল্লিশ বৎসর হইবে, বেঁটে, গৌরবর্ণ, সাটিন জিনের লম্বা কোটি গায়ে, সিস্কের