পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাই বোশেক জািষ্ট মাসে খেও ; লুকিয়ে লুকিয়ে ককখনো আর খেও না কেমন তো ? w হরিহর বলিল-কুঠি কুঠি বলছিলে, ঐ দুষ্ঠাখো খোকা সাহেবদের কুঠিদেখেচো ? নদীর ধারের অনেকটা জুড়িয়া সেকালের কুঠিটা যেখানে প্রাগৈতিহাসিক যুগের অতিকায় হিংস্র জন্তুর কঙ্কালের মত পড়িয়া ছিল, গতিশীল কালের প্রতীক নির্জন শীতের অপরাহ্ তাহার উপর অল্পে অল্পে তাহার ধূসর উত্তরাচ্ছদবিশিষ্ট আস্তরণ বিস্তার করিলা । কুঠির হাতার কিছু দূরে কুঠিয়াল লারমার সাহেবের এক শিশুপুত্রের সমাধি পরিত্যক্ত ও জঙ্গলাকীর্ণ অবস্থায় পড়িয়া আছে। বেঙ্গল ইণ্ডিগো কনসারনের বিশাল হেডকুঠির এইটুকু ছাড়া অন্য কোনও চিহ্ন আর অখণ্ড অবস্থায় মাটির উপর দাডাইয়া নাই । নিকটে গেলে অনেক কালের কালো পাথরের ফলকে এখনও পড়া যায় Here lies Edwin Lermor, The only son of John & Mrs Lermor, Born May 13, 1853, Died April 27, 1860 অন্য অন্য গাছপালার মধ্যে একটি বন্য সেঁন্দাল গাছ তাহার উপর শাখাপত্রে ছায়াবিস্তার করিয়া বাড়িয়া উঠিয়াছে, চৈত্র-বৈশাখ মাসে আড়াই-বাকীর। মোহান হইতে প্রবহমান জোর হওয়ায় তাহার, পীত পুষ্পস্তবক সারা দিনরাত ধরিয়া বিস্মৃত বিদেশী শিশুর ভগ্ন-সমাধির উপর রাশি রাশি পুষ্প ঝরাইয়া দেয়। সকলে ভুলিয়া গেলেও বনের গাছপালা শিশুটিকে এখনও ভোলে নাই। বালক অবাক হইয়া চারিদিকে চাহিয়া চাহিয়া দেখিতেছিল। তাহার ছয় বৎসরের জীবনে এই প্রথম সে বাড়ী হইতে এতদূরে আসিয়াছে। এতদিন নেড়াদের বাড়ী, নিজেদের বাড়ীর সামনেট, বড়জোর রানুদিদিদের বাড়ী, ইহাই ছিল তাহার জগতের সীমা । কেবল এক এক দিন তাহাদের পাড়ার ঘাটে মায়ের সঙ্গে স্নান করিতে আসিয়া সে স্নানের ঘাট হইতে আবছা দেখিতে পাওয়া কুঠির ভাঙা জালঘরটিার দিকে চাহিয়া চাহিয়া দেখিত-আঙুল দিয়া দেখাইয়া বলিত, মা, ওদিকে সেই কুঠি ? সে তাহার বাবার মুখে, দিদির মুখে, আরও পাড়ার কত লোকের মুখে কুঠির মাঠের কথা শুনিয়াছে, কিন্তু আজ তাহার প্রথম সেখানে আসা ! ঐ মাঠের পরে ওদিকে বুঝি মায়ের মুখের সেই রূপকথার রাজ্য ? শ্যাম লঙ্কার দেশে, বেঙ্গমা-বেঙ্গমীর গাছের নীচে, নির্বাসিত রাজপুত্র যেখানে তলোয়ার পাশে রাখিয়া একা শুইয়া রাত কাটায় ? ও-ধারে voç,