পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছিল মা, সকল আপদবিপদে সর্বজয়া ডানা মেলিয়া ছেলেকে আড়াল করিয়া রাখিতে প্রাণ পণ করিত, কোনও কিছুর আঁচ লাগিতে দিত না । দেওয়ানপুরে স্কলারশিপে বা ঢাকার বালক-বুদ্ধিতে যথেষ্ট শৌখিনতা করিয়াছে-খাইয়াছে, খাওযাইয়া ে, ভাল ভাল জামা কাপড় পরিয়াছে।--তখন সে সব জিনিস সন্তাও ছিল । কিন্তু শীঘ্রই অপু বুঝিল-কলিকাতা দেওয়ানপুর নয়। এখানে কেহ কাহাকেও পোছে না। ইউরোপে যুদ্ধ বাধিয়া গত কয়েক মাসের মধ্যে কাপডের দাম এত চডিয়াছে যে, কাপড আর কেনা যায় না । ভাল কাপড তাহার মোটে আছে একখানা, একটি টুইল শার্ট সম্বল। ছেলেবেলা হইতেই ময়লা কাপড় পরিতে সে ভালবাসে না, দু তিনদিন অন্তর সাবান দিয়া কাপড কাচিয়া শুকাইলে, তাহাই পরিয়া বাহির হইতে পারে। সবদিন কাপড় ঠিক সময়ে শুকায় না, কাপড় কাচিবার পরিশ্রমে এক-একদিন আবার ক্ষুধা এত বেশী পায় যে, মাত্র দু’পয়সার খাবারে কিছুই হয় না-ক্লাসে লেকচার শুনিতে বসিয়া মাথা যেন হঠাৎ শোলার মত হালকা বোধ হয়। এদিকে থাকার কষ্টও খুব ! সুরেশ্বর এম-এ পরীক্ষা দিয়া বাডি চলিয়া গিয়াছে, তাহার মেসে আর থাকিবার সুবিধা নাই। যাইবার আগে সুরেশ্বৰ একটা ঔষধের কারখানার উপরে একটা ছোট ঘরে তাহার থাকিবার স্থান ঠিক করিয়া দিয়া গিয়াছে। ঐ কারখানায় সুরেশ্বরের জানাশোনা একজন লোক কাজ করে ও রাত্রে ওপরের ঘরটাতে থাকে। ঠিক হইয়াছে, যতদিন কিছু একটা সুবিধা না হইতেছে, ততদিন অপু ওই ঘরটাতে লোকটার সঙ্গে থাকিবে । ” ঘরটা একে ছোট, তাহার উপর অর্ধেকটা ভাতি ঔষধ-বোঝাই প্যাকবাক্সে। রাশিরুত জঞ্জাল বাক্সগুলির পিছনে জমানো, কেমন একটা গন্ধা! নেংটি ইদুরের উৎপাতে কাপড়চোপড় রাখিবার জো নাই, অপুর একমাত্র টুইল শার্টটার দু’ জায়গায় কাটিয়া ফুটা করিয়া দিয়াছে। রাত্রে ঘরময় আরসোলার উৎপাত । ঘরের সে লোকটা যেমন নোংরা তেমনই তামাকপ্রিয়, রাত্রে উঠিয়া অন্ততঃ তিনবার তামাক সাজিয়া খায়। তাহার কাশির শব্দে ঘুম হওয়া দায়। ঘরের কোণে তামাকের গুল রাশিক্তি করিয়া রাখিয়া দেয়। অপু নিজে বার দুই পরিষ্কার করিয়াছিল। এক টুকরা রবারের ফিতার মতই ঘরের নোংরামিটা স্থিতিস্থাপক-পূর্বাবস্থায় ফিরিতে একটুকু দেরি হয় না। খাওয়া-পরা থাকিবার কষ্ট অপু কখনও করে নাই, বিশেষ করিয়া একলা যুঝিতে হইতেছে বলিয়া কষ্ট আরও বেশী । অন্যমনস্কভাবে যাইতে যাইতে সে কৃষ্ণদাস পালের স্মৃতির মোড়ে আসিল । yrir