পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহাতেই অনেকে তাহাকে দাম্ভিক ঠাওরাইয়া নানারূপ বিক্রপ ও টিটকারি দিতেও ছাড়িল না। কিন্তু অপু ও কবিতাটায় নিজেকে আদৌ উদ্দেশ্য করে। নাই, যদিও তাহার নিজেকে জাহির করার সম্পূহও কিছু কম ছিল না বা মিথ্যা গৰ্ব প্রকাশে সে ক্লাসের কাহারও অপেক্ষা কম নহে, বরং বেশী । তাহার নিজের দলের কেহ কেহ তাহাকে বিরিয়া কথা বলিতে বলিতে চলিল । ভিড় একটু কমিয়া গেলে সে সকলের নিকট হইতে বিদায় লইয়া কলেজ হইতে বাহির হইতে যাইতেছিল, গেটের কাছে একটি সতেরো আঠারো বছবের লাজুক প্রকৃতির ছেলে তাহাকে বলিল-একটুখানি দাড়াবেন ? অপু ছেলেটিকে চেনে না, কখনও দেখে নাই। একহারা, বেশ সুশ্রী, পাতলা সিস্কের জামা গায়ে, পায়ে জরির নাগরা জুতা। ছেলেটি কুষ্ঠিতভাবে বলিল,--আপনার প্রবন্ধটা আমায় একটু পড়তে দেবেন ? কাল আবার আপনাকে ফেরত দেব। অপুর আহত আত্মাভিমান পুনরায় হঠাৎ ফিরিয়া আসিল । খাতাখানা ছেলেটির হাতে দিয়া বলিল,-দেখবেন কাইণ্ডলি, যেন হারিয়ে না যায়-- আপনি বুঝি-সায়েন্স ?-ও ! পরদিন কলেজ বসিবার সময়ে ছেলেটি গোটেই দাড়াইয়াছিল-অপুর হাতে খাতাখানা ফিরাইয়া দিয়া ছোট একটি নমস্কার করিয়াই ভিড়ের মধ্যে কোথায় চলিয়া গেল। অন্যমনস্ক ভাবে ক্লাসে বসিয়া অপু খাতাখানা উন্টাইতেছিল, একখানা কি কাগজ খাতাখানার ভিতর হইতে বাহির হইয়া ইলেকৃট্রিক পাখার হাওয়ায় খানিকটা উড়িয়া গেল। পাশের ছেলেটি সেখানা কুড়াইয়া তাহার * হাতে দিলে সে পড়িয়া দেখিল, পেন্সিলে লেখা একটি কবিতা-তাহাকে উদ্দেশ করিয়া :- শ্রীযুক্ত অপূর্বকুমার রায় কবকমলেষু— বাঙ্গালী সমাজ যেন পঙ্কময় বদ্ধ জলাশয় নাহি আলো স্বাস্থ্যভরা, বহে হেথা বায়ু বিষময় জীবন-কোরকগুলি, অকালে শুকায়ে পড়ে ঝরি বঁাচাবার নাহি কেহ, সকলেই আছে যেন মারি । নাহি চিন্তা, নাহি বুদ্ধি, নাহি ইচ্ছা, নাহি উচ্চ আশা, সুখদুঃখ হীন এক জড়পিণ্ড, নাহি মুখে ভাষা। এর মাঝে দেখি যবে কোনো মুখ উজ্জ্বল সরস, নয়নে আশার দৃষ্টি, ওষ্ঠপ্রান্তে জীবন হরব