পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোথাও মাঠে-শহরের মধ্যে হঁপ ধরে-কোথাও একটা ঘাস দেখবার জো নেই কথাটা শুনিয়াই অপুর মনে হইল, এ ছেলেটি তো সম্পূর্ণ অন্য প্রকৃতির। স্বাস না দেখিয়া কষ্ট হয় এমন কথা তো আজ প্রায় একবৎসর কলিকাতার অভিজ্ঞতায় কলেজের কোন বন্ধুর মুখে শোনে নাই। সাউথ সেকশনেব ট্রেনে গোটাচারেক স্টেশন পাবে তাহারা নামিল। অপু কখনও এদিকে আসে নাই। ফঁাকা মাঠ, কেয়া ঝোপ, মাঝে মাঝে হোগলা বন। সরু মেঠো পথ ধবিয়া দুজনে হাটিয়া চলিতেছিল-ট্রেনের অল্প আধঘণ্টার আলাপেই দু’জনের মধ্যে একটা নিবিড় পরিচয় জমিয়া উঠিল। মাঠের মধ্যে একটা গাছের তলায় দুজনে গিয়া বসিল । ছেলেটি নিজের ইতিহাস বলিতেছিলহাজারিবাগ জেলায় তাহাদেব এক অভ্রের খনি ছিল, ছেলেবেলায় সে সেখানেই মানুষ। জায়গাটাব নাম বডবনী, চারিধারে পাহাড় আর শালপলাশের বন, কিছু দূবে দারুকেশ্বব নদী । • নিকটে পাহাডের গায়ে একটা ঝর্ণা ।• • • পড়ন্ত বেলায় শালবনের পিছনের আকাশটা কত কি রঙে রঞ্জিত গুইত-প্রথম বৈশাখে শাল-কুহুমের ঘন স্বগন্ধ দুপুরের রৌদ্রকে মাতাইত, পলাশবনে বসন্তের দিনে যেন ডালে ডালে আরতির পঞ্চপ্রদীপ জ্বলিতসন্ধ্যার পরই অন্ধকারে গা ঢাকিয়া বাঘেরা আসিত ঝর্ণার জল পান করিতেবাংলো হইতে একটু দূরে বালির উপর কতদিন সকালে বড় বড় বাঘের পায়ের থাবার দাগ দেখা গিযাছে । সেখানকার জ্যোৎস্না রাত্রি ! সে রাত্রির বর্ণনা নাই, ভাষা যোগায় না। স্বৰ্গ যেন দূরের নৈশকুয়াসাচ্ছন্ন অস্পষ্ট পাহাড়শ্রেণীর ওপারে-ছায়াহীন, সীমাহীন, অনন্তরস-ক্ষরা জ্যোৎস্না যেন দিকৃচক্রবালে তাহারই ইঙ্গিত দিত। এক-আধাদিন নয়, শৈশবের দশ দশটি বৎসর সেখানে কাটিয়াছে। সে অন্য জগৎ, পৃথিবীর মুক্ত প্রসারতার রূপ সেখানে চোখে কি মায়া-অঙ্গন মাখাইয়া দিয়াছো-কোথাও আর ভাল লাগে না ! অভ্রের খনিতে লোকসান হইতে লাগিল, খনি অপারে কিনিয়া লইল, তাহার পর হইতেই কলকাতায় । মন হাপাইয় ওঠে-খাচার পাখির মত ছট্‌ফট্‌ করে। বাল্যের সে অপূর্ব আনন্দ মন হইতে নিশ্চিহ্ন হইয়া মুছিয়া গিয়াছে। অপু এ ধরণের কথা কাহারও মুখে এ পর্যন্ত শোনে নাই-এ যে তাঁহারই অন্তরের কথার প্রতিধ্বনি। গাছপালা, নদী, মাঠ ভালোবাসে বলিয়া দেওয়ানপুরে তাহাকে সবাই বলিত পাগল। একবার মাঘমাসের শেষে পথে yd)