পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এত দিন হাতছাড়া করিতে পারে নাই-কিন্তু উপায় কি ? সাড়ে তিন টাকা দিয়া কেনা ছিল, বহু দোকান ঘুরিয়া তাহার দাম হইল এক টাকা তিন আনা। পর্দা বেচিয়া অনেকদিন পর সে ভাত রাধিবার ব্যবস্থা করিল। ছাতু খাইয়া খাইয়া অরুচি ধরিয়া গিয়াছে, বাজার হইতে এক পয়সার কলমী শাকও কিনিয়া আনিল । মনে পড়িল সে কলমী শাক ভাজা খাইতে ভালবাসিত বলিয়া ছেলেবেলায় দিদি যখন-তখন গড়ের কুর হইতে কত কলমী তুলিয়া অনিত । দিন সাতেক পর্দা-বেচা পয়সায় চলিল মন্দ নয়, তারপরই যে-কে সেই । আর পর্দা নাই, কিছুই নাই, একেবারে কানাকড়িটা হাতে নাই । কলেজ যাইতে হইল না-খাইয়া । বৈকালে কলেজ হইতে বাহির হইয়া সত্যষ্টি মাথা ঘুরিতে লাগিল, পরে সেই মাথা ঝিম্ ঝিম করা, পা নড়িতে না চাওয়া। মুশকিল। এই যে, ক্লাসে মিথ্যা গর্ব ও বাহাদুরির ফলে সকলেই জানে, সে অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে, কাহারও কাছে বলিবার মুখও তো নাই। দু’-একজন যাহারা জানে যেমন জানকী—তাহাদের নিজেদের অবস্থাও তথৈবচ। সারাদিন না খাইয়া সন্ধ্যার সময় বাসায় আসিয়াই শুইয়া পড়িল । রাত অ্যাটটার পরে আর না থাকিতে পারিয়া তেওয়ারী-বধূকে গিয়া জিজ্ঞাসা করিল। --ছোলা কি অড়হরের ডাল আছে, বহু ? আজ আর খিদে নেই তেমন, ব্রাধবো না। আর, ভিজিয়ে খেতাম । সকালে উঠিয়াই প্রথমে তাহার মনে আসিল যে, আজ সে একেবারে কপর্দকশূন্য। আজও কালকার মত না খাইয়া কলেজে যাইতে হইবে। কতদিন এভাবে চালাইবে সে ? না খাইয়া থাকার কষ্ট ভয়ান-কাল লজিকের ঘণ্টার শেষে সেটা সে ৬লি করিয়া বুঝিয়াছিল-বিকালের দিকে ক্ষুধাটা পডিয়া যাওয়াতে তত কষ্ট বোঝা যায় নাই—কিন্তু সেই বেলা দুটোর সময়টা ! --পেটে ঠিক যেন বোলতার পর্যাক হুল ফুটাইতেছে-বার দুই জল খাইবার ঘরে গিয়।। গ্লাস-কতক জল খাহীয়া কাল যন্ত্রণাটা অনেকখানি নিবারণ হইয়াছিল। আজ আবার সেই কষ্ট সম্মুখে ! হাতমুখ ধুইয়া ধাহির হইয়া বোলা দশটা পর্যন্ত সে আবার নানা গ্যাসপোস্টের বিজ্ঞাপন দেখিয়া বেড়াইল, তাহার পর বাসায় না ফিরিয়া সোজা কলেজে গেল । অন্য কেহ কিছু লক্ষ্য না করিলেও অনিল দু’তিনবার জিজ্ঞাসা করিল-আপনার কোনও অসুখ-বিসুখ হয়েছে ? মুখ শুকনো কেন ? অপু অন্য কথা পাড়িয়া প্রশ্নটা এড়াইয়া গেল। বই লইয়া আজি সে কলেজে আসে। নাই, খালি হাতে কলেজ হইতে বাহির হইয়া রাস্তায় রাস্তায় খানিকটা ঘুরিল । , SRR