পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তুলিয়া দিল। বলিল-সেদিন যখন আমার সঙ্গে প্রথম দেখা হ’ল, তুমি কি ভেবেছিলে ? মেয়েটি মৃদু হাসিয়া তাহার হাতখানা আন্তে আন্তে সরাইয়া দিয়া বলিল --আপনি কি ভেবেছিলেন আগে বলুন ?--সঙ্গে সঙ্গে সে নিজের সুঠাম, পুষ্পপেলব হাতখানি বাতির আলোয় তুলিয়া ধরিয়া হাসিমুখে বলিল-গায়ে কঁাটা দিয়ে উঠেছে-এই দেখুন কঁাটা দিয়েছে-কেন বলুন না ?-কথা শেষ করিয়া সে আবার মৃদু হাসিল। এতগুলি কথা একসঙ্গে এই প্রথম ? কি অপূর্ব রোমান্স এ ! ইহার অপেক্ষা কোন রোমান্স আছে আর এ জগতে, না চিনিয়া, না বুঝিয়া সে এতদিন কি হিজিবিজি ভাবিয়া বেড়াইয়াছে !• • • জীবনের জগতের সঙ্গে এ কি অপূর্ব ঘনিষ্ঠ পরিচয় ! তাহার মাথার মধ্যে কেমন যেন করিতেছে, মদ খাইলে বোধ হয় এরকম নেশা হয়- ‘ ঘরের হাওয়া যেন ঘবের মধ্যে যেন আর থাকা যায় না।--বেজায় গরম। সে বলিল-একটু বাইরের ছাদে বেড়িয়ে আসি, খুব গরম না ? আসছি। এখুনি বৈশাখের জ্যোৎস্না রাত্রি-রাত্রি বেশী হইলেও বাডির লোক এখনও ঘুমায় নাই, কাল এখানে বৌভাত হইবে, নিচে তাহারই উদ্যোগ আয়োজন চলিতেছে। দালানের পাশে বড় রোয়াকে বিয়েরা কচু শাক কুটিতেছে, রান্না-কোঠার পিছনে নতুন খড়ের চালা বাধা হইয়াছে, সেখানে এত রাত্রে পানতুয়ার ভিয়ান হইতেছে-সে। ছাদের আলিসার ধারে দাড়াইয়া দেখিল । ছাদে কেহ নাই, দূরের নদীর দিকে হইতে একটা ঝিাবুঝির হাওয়া বহিতেছে। যে কি ঘটিয়াছে তাহা যেন সে ভাল করিয়া বুঝিতেই পারে নাই-আজ বুঝিয়াছে কয়েকদিন পূর্বেও সে ছিল সহায়শূন্য, বন্ধুসূন্য, গৃহাশূন্য, আত্মীয়াশূন্য জগতে সম্পূর্ণ একাকী, মুখের দিকে চাহিবার ছিল না কেহই। কিন্তু আজ তো তাহা নয়, আজ ওই মেয়েটি যে কোথা হইতে আসিয়া পাশে দাডাইয়াছে, মনে হইতেছে যেন ও জীবনের পরম বন্ধু। মা এ-সময় কোথায় ? মায়ের ষে বড় সাধ ছিল মনসাপোতার বাডিতে শুইয়া শুইয়া কত রাত্রে সে-সব কত সাধ, কত আশার গল্প মায়ের সোনার দেহ কোদলাতীরের শ্মশানে চিতাগ্নিতে পুড়িবার রাত্রি হইতে সে আশাআকাজক্ষার তো সমাধি হইয়াছিল মাকে বাদ দিয়া জীবনের কোন উৎসব• • • তপ্ত আকুল চােখের জলে চারিদিকে ঝাপসা হইয়া আসিল। বৈশাখী শুক্ল দ্বাদশী রাত্রির জ্যোৎস্না যেন তাহার পরলোকগত দুঃখিনী ৷ Str