পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে ঢুকিয়া অপরাধীর দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চাহিল। সর্বজয়া বলিল-এলে। এসো, ভাত তৈরী। খেয়ে আমায় উদ্ধার করে-তারপর আবার কোনদিকে বেরুতে হবে বেরোও । বোশেখ মাসের দিন সকলের মেয়ে দ্যাখো গে যাও সেঁজুতি করচে, শিবপুজো করচে-আর অতবড় ধাড়ী মেয়ে-দিনরাত কেবল টো টো। সেই সকাল হতে না হতে বেরিয়েচে, আর এখন এই বেলা দুপুর ঘুরে গিয়েছে, এখন এল বাড়ী-মাথাটার ছিরি দ্যাখো না ? না একটু তেল দেওয়া, না একটু চিরুণী ছোয়ানো-কে বলবে বামুনের মেয়ে, ঠিক যেন দুলে কি বাগদীদের কেউ-বিয়েও হবে ঐ দুলে-বাগ দীদের বাড়ীতেই-আঁচলে ওগুলো কী ধনদৌলত বাধা-খোল দুৰ্গা ভয়ে ভয়ে আঁচলের খুঁটি খুলিতে খুলিতে কহিল-ওই রায়-কাকাদের বাড়ীর সামনে কালকাসুন্দে গাছে—পরে ঢোক গিলিয়া কহিল--এই অনেক বেনেবৌ, তাই বেনে-বৌ এর কথায় হৃদয় গলে না। এমন পাষাণ জীবও জগতে অনেক আছে। সর্বজয়া তেলে-বেগুনে জলিয়া কহিল-তোর বেনেবৌয়ের না নিকুচি করেচে, যত ছাই আর ভাসসো রাতদিন বেঁধে নিয়ে ঘুরচেন-আজি টান মেরে তোমার পুতুলের বাক্স ঐ বঁাশতলার ডোবায় যদি না ফেলি। তবে সর্বজয়ার কথা শেষ হইবার পূবেই এক ব্যাপার ঘটিল। আগে আগে ভুবন মূখুয্যের বাড়ীর সেজ ঠাকরুণ, পিছনে পিছনে তাহার মেয়ে টুন্য ও দেওরের ছেলে সতু, তাহাদের পিছনে আর চার পাঁচটি ছেলেমেয়ে সম্মুখে দরজা দিয়া বাড়ী ঢুকিল। সেজ ঠাকরুণ কোনো দিকে না চাহিয়া বা বাড়ীর কাহারও সহিত কোনো আলাপ না করিয়া সোজা হনহন করিয়া ভিতরের দিকের রোয়াকে উঠিলেন। নিজের ছেলের দিকে ফিরিয়া বলিলেন-কৈ নিয়ে আয় --বের কর পুতুলের বাক্স, দেখি এ বাড়ীর কেহ কোনো কথা বলিবার পূর্দেষ্ট টুনু ও সতু, দুজনে মিলিয়া দুর্গার টিনের পুতুলের বাক্সটা ঘর হইতে বাহির করিয়া আনিয়া রোয়াকে নামাইল এবং টুক্ত বাক্স খুলিয়া খানিকটা খুঁজিবার পর একছড়া পুতির মালা বাহির করিয়া বলিল-এই দ্য খে। মা, আমার সেই মালাটা-সেদিন যে সেই খেলতে গিয়েছিল, সেদিন চুরি করে এনেচে। সতু বাক্সের এক কোন সন্ধান করিয়া গোটাকতক আমের গুটি বাহির করিয়া বলিল-এই দ্যাপো জ্যোঠামা আমাদের সোনামুখী গাছের আমি পেড়ে এনেচে । ব্যাপারটা এত হঠাৎ হইয়া গেল বা ইহাদের গতিবিধি এ বাড়ীর সকলের কাছেই এত রহস্যময় মনে হইল যে এতক্ষণ কাহারও মুখ দিয়া কোন কথা 登9