পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করিয়া দাড়াইয়া আছে। কোথাও সূক্ষ্ম কারুকার্যের প্রচেষ্টা নাই, নিষ্ঠুর বটে, রুক্ষ বটে, কিন্তু সবটা মিলিয়া এমন বিশালতার সৌন্দর্য, পৌরুষের সৌন্দর্য, বর্বরতার সৌন্দর্য-ষা মনকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে, হৃদয়কে বজমুষ্টিতে আঁকড়াইয়া ধরে। সব আসছে, কিন্তু দেহে প্রাণ নাই, চারিধারে ধ্বংসস্তৃপ, কঁাটাগাছ, বিশৃঙ্খলতা বড় বড় পাথর গড়াইয়া উঠিবার পথ বুজাইয়া রাখিয়াছে --মৃত্যুমুখের ভ্রকুট মাত্র। সাধু নিজামউদ্দিনের অভিশাপ মনে পড়িল-ইয়ে বসে গুজব, ইয়ে রাহে 呜可一 পৃথ্বীরাজের দুর্গের চবুতরার উপর যখন সে দাড়াইয়া-হি-হি, মুশকিল, কি অদ্ভুতভাবে নিশ্চিন্দিপুরের সেই বনের ধারের ছিরে পুকুরটা এ দুর্গের সঙ্গে জড়িত হইয়া আছে, বাল্যে তাহারই ধারের শেওড়াবনে বসিয়া ‘জীবন-প্রভাত’ পড়িতে পড়িতে কতবার কল্পনা করিত, পৃথ্বীরাজের দুর্গ ঘিরে পুকুরের উচু ও-দিকের পাড়টার মত বুঝি !• • •এখনও ছবিটা দেখিতে পাইতেছে-কতকগুলি গুগলি শামুক, ও-পারের বঁাশঝাড়। যাকৃ চবুতরার উপর দাড়াইয়া থাকিতে থাকিতে দূর পশ্চিম আকাশের চারিধারের মহাশ্মশানের উপর ধূসর ছায়া ফেলিয়া সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের কাহিনী আকাশের পটে আগুনের অক্ষরে লিখিয়া সুর্য অন্ত গেল। সে সব অতি পবিত্র, গোপনীয় মুহূর্ত অপুর জীবনে --দেবতারা তখন কানে কানে কথা বলেন, তাহার জীবনে এরূপ সূর্যান্ত আর কটা বা আসিয়াছে ? ভয় ও বিস্ময় দুই-ই হইল, সারা গায়ে যেন কঁাটা দিয়া উঠিল, কি অপূর্ব অনুভূতি ! জীবনের চক্রবালনেমি এতদিন যেন কত ছোট, অপরিসর ছিল, আজকার দিনটির অপু তাহ জানিত না । নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মসজিদ প্রাঙ্গণে সম্রাট-দুহিতা জাহানারার তৃণাবৃত পবিত্র কবরের পার্থে দাড়াইয়া মসজিদ দ্বারে ক্রীত দু-চার পয়সার গোলাপফুল ছড়াইতে ছড়াইতে অপুর অশ্রু বাধা মানিল না। ঐশ্বর্যের-মধ্যে, ক্ষমতার দম্ভের মধ্যে লালিত হইয়াও পুণ্যবতী শাহজাদীর এ দীনতা, ভাবুকতা, তাহার কল্পনাকে মুগ্ধ রাখিয়াছে চিরদিন। এখনও যেন বিশ্বাস হয় না যে, সে যেখানে দাড়াইয়া আছে সেটা সত্যই জাহানারার কবর-ভূমি। পরে সে মসজিদ হইতে একজন প্রৌঢ় মুসলমানকে ডাকিয়া আনিয়া কবরের শিরোদেশের মার্বেল ফলকের সেই বিখ্যাত ফার্সী কবিতাটি দেখাইয়া বলিল, মেহেরবানি কারকে পঢ়িয়ে, হাম লিথ লেঙ্গে । প্রৌঢ়টি কিঞ্চিৎ বকশিশের লোভে খামখেয়ালী বাঙালীবাবুটকে খুশী করার জন্য জোরে জোরে পড়িল R