পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঝে মাঝে খেলা-আসুন আপনি । উনি, আর আপনি -আর একজন ? -আর কোথায় ? আমি আর আপনি বসব-উনি এক দু’হাত নিয়ে খেলবেন । জ্যোৎস্না রাত্রে বাংলোর বারান্দাতে সে কথকতা আরম্ভ করিল । জড়ভারতের বাল্যজীবনের করুণ কাহিনী নিজেরই শৈশব-স্মৃতির ছায়াপাতে, সত্য ও পূত হইয়া উঠে, কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটে বাবার গলার স্বর কেমন করিয়া অলক্ষিতে তাহার গলায় আসে- শালবনের পত্র-মৰ্মরে, নৈশ পাখির গানের মধ্যে রাজষি ভরতের সরল বৈরাগ্য ও নিম্পূহ আনন্দ যেন প্রতি সুরমুছনাকে একটি অতি পবিত্র মহিমময় রূপ দিয়া দিল। কথকতা থামিলে সকলেই চুপ করিয়া রহিল। অপু খানিকটা পর হাসিয়া বলিল-কেমন লাগল ? অবনীবাবু একটু ধর্মপ্রাণ লোক, তাহার খুবই ভাল লাগিয়াছিল-কথকতা দু-একবার শুনিয়াছেন বটে, কিন্তু এ কি জিনিস ! ইহার কাছে সে সব लांहों कीं । কিন্তু সকলের চেয়ে মুগ্ধ হইলেন অবনীবাবুর স্ত্রী। জ্যোৎস্নার আলোতে তঁহার চোখ ও কপালে অশ্রু চিক্-চিক্‌ করিতেছিল। অনেকক্ষণ তিনি কোন কথা বলিলেন না। স্বদেশ হইতে দূরে এই নিঃসন্তান দম্পতির জীবনযাত্রা এখানে একেবারে বৈচিত্র্যহীন, বহুদিন এমন আনন্দ তাহদের কেহ দেয় নাই । দিন দুই পরে অবনীবাবুর বন্ধু মিঃ রায়চৌধুরী আসিলেন, ভারী মনখোলা ও অমায়িক ধরণের লোক, বয়স চল্লিশের কাছাকাছি, কানের পাশে চুলে পাক ধরিয়াছে, বলিষ্ঠ গঠন ও সুপুরুষ। একটু অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খান। জব্বলপুর হইতে হুইস্কি আনাইয়াছেন কিরূপ কষ্ট স্বীকার করিয়া, খানিকক্ষণ তাহার বর্ণনা করিলেন। অবনীবাবুও যে মদ খান অপু তাহা ইতিপূর্বে জানিত না । মিঃ রায়চৌধুরী অপুকে বলিলেন, আপনার গুণের কথা সব শুনলাম, অপূর্ববাবু। সে আপনাকে দেখেই আমার মনে হয়েছে। আপনার চোখ দেখলে যে-কোন লোক আপনাকে ভাবুক বলবে। তবে কি জানেন, আমরা হয়ে পড়েছি ম্যাটার-অফ-ফ্যাক্ট । আজ। আপনাকে আর একবার কথকতা করতে হবে, ছাড়াচি নে আজ ! কথাবার্তায়, গানে হাসিখুশিতে সেদিন প্রায় সারারাত কাটিল। মিঃ রায়চৌধুরী চলিয়া যাইবার দিন তিনেকু পরে একজন চাপরাসী তাহার নিকট হইতে অপুর নামে একখানা চিঠি আনিল। তাহার ওখানে একটা ড্রিলিং তাবুর তত্ত্বাবধানের জন্য একজন লোক দরকার। অপূর্ববাবুকি আসিতে রাজী Saዓ ●