পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে দেখে নাই। সে যেখানে থাকে, সেখানকার বন ইহার তুলনায় শিশু, নিতান্ত অবোধ শিশু। দুপুরের পর যে বন শুরু হইয়াছে তাহা এখনও শেষ হয় নাই। অথচ সন্ধ্যা হইয়া আসিল । অন্ধকার নামিবার আগে একটা উচু পাহাড়ের উপরকার চড়াই পথে উঠিতে হইল-উঠিয়াই দেখা গেলা-সর্বনাশ, সামনে আবার ঠিক এমনি আর একটা পাহাড়। অপুর পায়ের ব্যাথাটা খুব বাড়িয়াছিল, তৃষ্ণাও পাইয়াছিল বেজায়-অনেকক্ষণ হইতে জলের সন্ধান মেলে নাই, আবলুস গাছের তলা বিছাইয়া অম্লমধুর কেঁদফল পড়িয়াছিল-সারা দুপুর তাহাই চুষিতে চুষিতে কাটিয়াছো-কিন্তু জল অভাবে আর চলে না । দূরে দূরে, উত্তরে পশ্চিমে নীল পর্বতমালা। নিম্নে উপত্যকার ঘন বনানী সন্ধ্যার ছায়ায় ধূসর হইয়া আসিতেছে, সরু পথটা বনের মধ্য দিয়া আঁকিয়াবঁকিয়া নামিয়া গিয়াছে। সৌভাগ্যের বিষয়, সন্মুখে পাহাড়টার ওপারে এক মাইলের মধ্যে বন-বিভাগের একটা ডাকবাংলো পাওয়া গেল । চারিধারে নিবিড় শাল বন, মধ্যে ছোট খড়ের ঘর । খনি ও বনবিভাগের লোকেরা মাঝে মাঝে রাত্রি কাটায় । এ রাত্রির অভিজ্ঞতা ভারি অদ্ভূত ও বিচিত্র। বাংলোতে অপুৱা একটি প্রৌঢ় লোককে পাইল, সে ইহারই মধ্যে খিল দিয়া বসিয়া কি পড়িতেছিল, ডাকাডাকিতে উঠিয়া দরজা খুলিয়া দিল । জিজ্ঞাসা করিয়া জানা গেল, লোকটা মৈথিলী ব্রাহ্মণ, নাম আজবলাল ঝা । বয়স ষাট বা সত্তর হইবে। সে সেই রাত্রে নিজের ভাণ্ডার হইতে আটা ও ঘূত বাহির করিয়া আনিয়া অপুর নিষেধ সত্ত্বেও উৎকৃষ্ট পুরি ভাজিয়া আনিল-পরে অতিথি-সৎকার সারিয়া সে ঘরের মধ্যে বসিয়া সু-স্বরে সংস্কৃত রামায়ণ পড়িতে আরম্ভ করিল। কিছু পরেই অপু বুঝিল লোকটা সংস্কৃত ভাল জানে-নানা কাব্য উত্তমরূপে পড়িয়াছে। নানাস্থান হইতে শ্লোক মুখস্থ বলিতে লাগিল-কাব্যচর্চায় অসাধারণ উৎসাহ, তুলসীদাসী রামায়ণ হইতেই অনর্গল দোহা আবৃত্তি করিয়া थांझेऊ लांत्रिंक् । ক্রমে ওঝাজী নিজের কাহিনী বলিল। দেশ ছিল দ্বারভাঙ্গা জেলায়। সেখানেই শৈশব কাটে, তের বৎসর বয়সে উপনয়নের পর এক বেনিয়ার কাছে চাকরী লইয়া কাশী আসে। পড়াশুনা সেইখানেই-তারপরে কয়েক জায়গায় টোল খুলিয়া ছাত্র পড়াইবার চেষ্টা করিয়াছিল-কোথাও সুবিধা হয় নাই। পেটের ভাত জুটে না, নানা স্থানে ঘূরিবার পর এই ডাকবাংলোয় আজ সাত-আট বছর বসবাস করিতেছে। লোকজন বড় এখানে কেহ আসে না, $ ዓbም