পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালেভদ্রে এক-আধ-জন, সে-ই একা থাকে, মাঝে মাঝে তের মাইল দূরের বন্তি হইতে খাবার জিনিস ভিক্ষা করিয়া আনে, বেশ চলিয়া যায়। সে আছে আর আছে তাহার কাব্যগ্রন্থগুলি-তাহার মধ্যে দুখান হাতে লেখা পুথি মেঘদূত ও কয়েক সর্গ ভট্ট। অপুর অত সুন্দর লাগিল। এই নিরীহ, অদ্ভুত প্রকৃতির লোকটির কথাবার্তা ও তাহার আগ্রহভরা কাব্যপ্রীতি-এই নির্জন বনবাসের একটা শান্ত সন্তোষ । তবে লোকটি যেন একটু বেশী বকে, বিদ্যাটা যেন বেশী জাহির করিতে চায় -কিন্তু এত সরলভাবে করে যে, দোষ ধরাও যায় না। অপু বলিলপণ্ডিতজী, আপনাকে থাকতে দেয়, কেউ কিছু বলে না ? --না। বাবুজী, নাগেশ্বরপ্রসাদ বলে একজন ইঞ্জিনীযার আছেন, তিনি আমাকে খুব মানেন, সেই জন্যে কেউ কিছু বলে না । কথায় কথায় সে বলিল-আচ্ছা পণ্ডিতজী, এ বন কি অমরকণ্টক পর্যন্ত এমনি ঘন ? —বাবুজী, এই হচ্ছে সেই প্রসিদ্ধ বিন্ধ্যারণ্য। অমরকণ্টক ছাড়িয়া বহুদূর পর্যন্ত বন, এমনি ঘন-চিত্রকূট ও দণ্ডকারণ্য এই বনের পশ্চিম দিকে। এর বর্ণনা শুনুন। তবে নৈষবচরিতে-দময়ন্তী রাজ্যভ্রষ্ট নলের সঙ্গে ছাড়াছাডি হবার পরে এই বনে পপ হারিয়ে ঘুরছিলেন-ঋক্ষবান পর্বতের পাশের পথ দিয়ে তিনি বিদর্ত্ত দেশে চলে যান । রামায়ণেও এই বর্ণনা শুনবেন অরণ্যকাণ্ডে । শুনুন। তবে । অপু ভাবিল লোকটা বর্তমানের কোন ধার ধারে না, প্রাচীন শিক্ষাদীক্ষায় একেবারে ডুবিয়া আছে-সব কথায় পুরাণের কথা আনিয়া ফেলে। লোকটিকে ভারী অদ্ভুত লাগিতেছিল-সারাজীবন এখানে-ওখানে ঘুরিয়া কিছুই করিতে পারে নাই-এই বনবাসে নিজের প্রিয় পুথিগুলা লইয়া বৎসরের পর বৎসর কাটাইয়া চলিয়াছে, কোন দুঃখ নাই, কষ্ট নাই। ঐ ধরণের লোকের দেখা মেলে না বেশী । ওঝাজী সুস্বরে রামায়ণের বর্ণনা পড়িতেছিল। কি অদ্ভুতভাবে যে চারিপাশের দৃশ্যের সঙ্গে খাপ খায়। নির্জন শালবনে অস্পষ্ট জ্যোৎস্না উঠিয়াছে, তেন্দু ও চিরঞ্জীগাছের পাতাগুলি এক এক জায়গায় ঘন কালো দেখাইতেছে। বনের মধ্যে শিয়ালের দল ডাকিয়া উঠিয়া প্রহর ঘোষণা করিল। কোথায় রেল, মোটর, এরোপ্লেন, ট্ৰেড-ইউনিয়ন ? ওকাজীর মুখে অরণ্যকাণ্ডের শ্লোক শুনিতে শুনিতে সে যেন অনেক দূরের এক সুপ্রাচীন জাতির অতাত সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে পড়িল একেবারে । অতীতের গিরিতরদিণী &o