পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন্ধ্যার কিছু আগে সে বাডি পৌছিল। খুড়ীমা ভাঙা রোয়াকের ধারে কম্বলের আসন পাতিয়া বসিয়া মালা জপ করিতেছিলেন, তাহাকে দেখিয়া কঁাদিয়া ফেলিলেন। খুড়ীমার নিজের ছেলেটি মানুষ নয়, গাজা খাইয়া বেড়ায়, প্রণবকে ছেলেবেলা হইতে মানুষ করিয়াছেন, ভালোওবাসেন, কিন্তু লেখাপড়া জানিলে কি হইবে, তাহার পুনঃ পুন: সদুপদেশ সত্ত্বেও সে কেবলই নানা হাঙ্গামায় পন্ডিতেছে, ইচ্ছা করিয়া পডিতেছে। এ বৃদ্ধিবয়সে শুধু তঁহারই মরণ নাই, ইত্যাদি নানা কথা ও তিরস্কার প্রণবকে বোয়াকোব ধারে দাড়াইয়া শুনিতে হইল ! বাগানের বড় কঁঠাল গাছের একটা ডাল কে কাটিয়া লইয়া গিয়াছে, খুড়ীম চৌকি দিয়া বেড়ান। কখন, তিনি ও-সব পারিবেন না, তঁাহাকে যেন কাশী পঠাইয়া দেওয়া হয়, কারণ কর্তাদের অত কষ্ট্রের বিষয়-সম্পত্তি চােখের উপর নষ্ট হইয়া যাইতেছে, এ দৃশ্য দেখাও তাহার পক্ষে অসম্ভব । দিনচারেক বাডি থাকিয়া খুড়ীমাকে একটু শান্ত করিয়া চশমার ব্যবস্থার দোহাই দিয়া সে কলিকাতায় রওনা হইল। সোদপুরে খুড়ীমার একজন ছেলেবেলার-পাতানো গোলাপফুল আছেন, তাহারা প্রণবকে দেখিতে চান। একবার, সেখানে যেন সে অবশ্য অবশ্য যায়, খুড়ীমার মাথার দিব্য । প্রণব মনে মনে হাসিল । বৎসর-চার পূর্বে গোলাপ-ফুলের বড় মেয়েটির যখন বিবাহের বয়স হইয়াছিল, তখন খুড়ীীমা এই কথাই বলিয়াছিলেন, কিন্তু প্রণব যাওয়াব সময় করিয়া উঠিতে পারে নাই। তারপরই আসিল নন-কো-অপারেশনের ঢেউ, এবং নানা দুঃখ-দুর্ভোগ। সেটির বিবাহ হইয়াছে, এবার বোধ হয়। চোটটির পালা । কলিকাতায় আসিয়া সে প্রথমে অপুর খোজ করিল, পরিচিত স্থানগুলিতে গিয়া দেখিল, দু-একদিন ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরী খুজিল কারণ মন্দি অপু কলিকাতায় থাকে ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরীতে না আসিয়া থাকিতে পরিবে না । কোথাও তাহার সন্ধান মিলিল না। চাপদানীতে যে অপু নাই তাহা তিন বৎসর আগে জেলে ঢুকিবার সময় জানিত, কারণ তাহারও প্রায় এক বৎসর আগে অপু সেখান হইতে চলিয়া গিয়াছে। একদিন সে মন্মথদের বাড়ি গেল । তখন রাত প্রায় আটটা, বাহিরের ঘরে মন্মথ বসিয়া কাগজপত্র দেখিতেছে। সে আজকাল এটানি, খুড়-শ্বশুরের বস্তু নামডাক ও পাশারের সাহায্যে নতুন বসিলেও দু’পয়সা উপার্জন করে। মন্মথ যে ব্যবসায়ে উন্নতি করিবে, তাহার প্রমাণ প্রণব সেদিনই পাইল । ঘণ্টাখানেক কথাবার্তার পরে রাত সাড়ে সাতটার কাছাকাছি মন্মথ যেন