পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত বিংশ পরিচ্ছেদ আবও এক বৎসর কাটিয়া গিয়াছে।। চৈত্র মাস যায় যায়। অপু অনেকদিন পরে দেশে ফিরিতেছিল। গাডির মধ্যে একজন মুসলমান ভদ্রলোক লক্ষ্মেী-এবি খরমুজার গুণবর্ণনা করিতেছিলেন, অনেকে মন দিয়া শুনিতেছিল--অপু অন্যমনস্কভাবে জানালার বাহিবে চাহিয়াছিল। কতক্ষণে গাডি বাংলা দেশে আসিবে ? সাতসমূদ্র তেরোনদীর পাবের রূপকথার রাজ্য বাংলা ! আজি দীর্ঘ সাডে পাঁচ বৎসর সে বাংলার শান্ত, কমনীয় রূপ দেখে নাই, এই বৈশাখে বঁাশেব বনে বনে শুকনো বঁাশখোলার তলা-বিছাইয়া পডিয়াথাকা, কাঞ্চনফুলে-ভরা সান-বাঁধানো পুকুবের ঘাটে সদ্যস্নাত নতমুখী তরুণীর মূতি-কলিকাতাব মেস-বাটী, দালানের রেলিং-এ কাপড মেলিয়া দেওয়া, বাবুবা সব অফিসে, নিচের বালতিতে বৈকাল তিনটার সময় কলের মুখ হইতে জল পডিতেছে-এ সব সুপবিচিত প্রিয় দৃশ্যগুলি আর একবার দেখিবার জন্য —উঃ, মন কি ছটফটই না করিয়াছে গত ছ’বছব। বাংলা ছাডিয়া সে ভাল কবিয বাংলাকে চিনিয়াছে, বুঝিয়াছে। কতক্ষণে বাংলাকে দেখা যাইবে আজ ? সন্ধ্যা ঠিক সাতটাব সময় । বাণীগঞ্জ ছাডিয়া অনেক দূর আসিবার পরে, বালুময় মাঠের মধ্যে সিঙ্গারণ নদীর গ্রীষ্মের জল খররৌদ্রে শুকাইয়া গিয়াছে-দূর গ্রামের মেয়েরা আসিয়া * নদীখাতের বালু খুঁডিয়া সেই জলে কলসী ভতি করিয়া লইতেছে-একটি কৃষক-বধু জল-ভবা কলসী কঁাখে রেলের ফটকের কাছে দাড়াইয়া গাড়ি দেখিতেছে-অপু দৃশ্যটা দেখিয়া পুলকিত হইয়া উঠিল-সারা শরীরে একটা অপূৰ্ব আনন্দ-শিহাবণ । কতদিন বাংলার মেয়ের পরিচিত ভঙ্গিটি সে দেখে নাই! চোখ মন জুড়াইয়া গেল । বর্ধমান ছাড়াইয়া নিদাঘ অপরাহ্নের ঘন ছাওয়ায় একটা অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়িল। একটা ছোট পুকুর ফুটন্ত পদ্মফুলে একেবারে ভরা, ফুলের পাতায় জল দেখা যায় না-ওপারে বিচালি-ছাওয়া গৃহন্থের বাটি, একটা প্রাচীন সজিনা গাছ জলের ধারে ভাঙিয়া পড়িয়া গালিয়া খসিয়া যাইতেছে, একটা গোবরগাদা —আজি সারাদিনের আগুন-বৃষ্টির পরে, বিহার ও সাঁওতাল পরগণার বন্ধুর আগুন-রাঙা ভুমিশ্রীর পরে, ছায়াভিরা পদ্মপুকুরটা যেন সারা বাংলার কমনীয় রূপের প্রতীক হইয় তাহার চোখে দেখা দিল । Rae