পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় ঘটিয়াছে জীবনে-কত সাধু-সন্ন্যাসী, দোকানী, মাস্টার, ভিখারী, গায়ক, পুতুল-নাচওয়ালা, আম-পাড়ানি, ফেরিওয়ালা, লেখক, কবি, ছেলেমেয়ে-এদের কথা । আজিকার দিন হইতে অনেক দিন পরে-হয়তো শত শত বৎসর পরে তাহার নাম যখন এ বছরের-ফোট-শালফুলের মঞ্জুরীর মত-কিংবা তাহার ঘরের কোণের মাকড়সার জালের মত-কোথায় মিলাইয়া যাইবে, তখন তাহার কত অনাগত বংশধর কত সকালে সন্ধ্যায়, মাঠে, গ্রাম্য নদীতীরে, দুঃখের দিনে, শীতের সন্ধ্যায় অথবা অন্ধকার গহন নিস্তব্ধ দুপুর-রাত্রে, শিশিরভেজা ঘাসের উপর তারার আলোর নীচে শুইয়া-শুইয়া তাহার বই পন্ডিবে -কিংবা বইয়ের কথা ভাবিবে। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কত আশঙ্কাও জাগে । যদি কেউ না পড়ে । আবার ভাবে, পৃথিবীর কোন অতীতে আদিম যুগের শিল্পীদল দুৰ্গম গিরিগুহার অন্ধকারে বৃষ, বাইসন, ম্যামথ আঁকিয়া গিয়াছিল-প্রাচীনদিনের বিস্মৃতি প্রতিভা এতকাল পর তাহার দাবি আদায় করিতেছে-নতুবা ক্যান্টাব্রিয়া, দর্দঞ ও পিবেনিজের পর্বতগুহাগুলায় দেশবিদেশের মনীষী ও ভ্রমণকারীদের এত ভিড় কিসের ? তেলাকুচা লতাটা শুকাইয়া গিয়াছে ; কিন্তু সে জীবন দিয়া ফলটাকে মানুষ করিয়া গিয়াছে যে ! আত্মদানের ফল বৃথা যাইবে না । কত গাছ গজাইবে বীজে নিজের প্রথম বইখানি-মনে কত চিন্তাই আসে। অনভিজ্ঞ মন সবটাতেই অবাক হইয়া যায়, সবটাতেই গাঢ় পুলক অনুভব করে। এই তাহার বই লেখার ইতিহাস । কিন্তু প্রথম ধাক্কা খাইল বইখানার পাণ্ডুলিপি হাতে দোকানে দোকানে ঘূরিয়া। অজ্ঞাতনামা লেখকের বই কেহ লওয়া দূরে থাকুক, ভাল করিয়া কথাও বলে না। একটা দোকানে খাতা রাখিয়া যাইতে বলিল। দিন পাঁচেক পরে তাহদের একখানা পোস্টকার্ড পাইয়া অপু ভাল কাপড় পরিয়া, জুতা বুরুষ করিয়া বন্ধুর চশমা ধার করিয়া দুরু-দুরু বক্ষে সেখানে গিয়া হাজির হইল। অত ভাল বই তাহার-পড়িয়া হয়ত উহারা অবাক হইয়া গিয়াছে । দোকানের মালিক প্রথমে তাহাকে চিনিতে পারিল না, পরে চিনিয়া বলিল-ও । ওহে সতীশ, এর সেই খাতাখানা একে দিয়ে দাও তো-বড় আলমারির দেয়াজে দেখো ।