পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৬৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এত দিন সে এখানে আসিলেও নিজেদের ভিটাতে ঢুকিতে পারে নাই, যদিও বাহির হইতে সেটা প্রতিদিনই দেখিত ; কারণ ঘাটের পথটা তার পাশ দয়াই। বিকালের দিকে সে একদিন এক চুপি চুপি বনজঙ্গল ঠেলিয়া সেখানে চুকিল। বাড়িটা আর নাই, পিডিয়া ইট ভূপাকার হইয়া আছে-লতাপাত, শ্যাওডাবন, বনলতার গাছ, ছেলেবেলাকার মত কালমেঘের জঙ্গল । পিছনের বঁাশঝাডগুলা এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বাডিয়া চারিধারে ঝুকিয়া পডিয়াছে। কোনও ঘরের চিহ্ন নাই, বন জঙ্গল, রাঙা রোদ বঁাশের মগডালে । পশ্চিমের পাচিলের গায়ে সেই কুলুঙ্গিটা আজও আছে, ছেলেবেলায় যে কুলুঙ্গিটাতে সে ভাটা, বাতাবীলেবুর বল, কডি রাখিত। এত নিচু কুলুঙ্গিটা তখন কত উচু বলিয়া মনে হইত, তাহার মাথা ছাড়াইয়া উচু ছিল, ডিঙ্গাইয়া দাড়াইলে তবে নাগাল পাওয়া যাইত ! ঠেস দেওয়ালের গায়ে ছুরি দিয়া ছেলেবেলায় একটা ভূত আঁকিয়াছিল, সেটা এখনও আছে। পাশেই নীলমণি জ্যাঠামশায়ের পোডোভিটা-সেও ঘন বনে ভরা, চারিধার নিঃশব্দ, নির্জন-এ পাডাটাই জনহীন হইয়া গিয়াছে, এধার দিয়া লোকজনের যাতায়াত বড় কম। এই সে স্থানটি, কতকাল আগে যেখানে দিদি ও সে একদিন চড়ুইভাতি করিয়াছিল ! কণ্টকাকীর্ণ শেয়াকুল বনে দুৰ্গম দুর্ভেদ্য হইয়া পড়িয়াছে সাবা জায়গাটা । পোডোভিটার সে বেলগাছটা-একদিন যার তলায়৷ ভীস্মদেব শরশয্যা পাতিতেন তাহার নয়। বৎসরের শৈশবে-সেটা এখনও আছে, পুষ্পিত শাখা-প্রশাখার অপূর্ব সুবাসে অপরাহের বাতাস স্নিগ্ধ করিয়া তুলিয়াছে। পাচিলের ঘুলঘুলিটা কত নিচু বলিয়া মনে হইতেছে, এইটাতেই অপু আশ্চর্য হইল-বার বার কথা তার মনে হইতেছিল। কত ছোট ছিল সে তখন ! খোকার মত অতটুকু বোধ হয়। কঁাচাকলায়ের ডালের মত সেই কি লতার গন্ধ বাহির হইতেছে । • • • কতদিন গন্ধটা মনে ছিল না, বিদেশে আর সব কথা হয়ত মনে পন্ডিতে পারে, কিন্তু পুরাতন দিনের গন্ধগুলা তো মনে পড়ে না এ অভিজ্ঞতাটা অপুর এতদিন ছিল না । সে দিন বঁাওডের ধারে বেড়াইতে গিয়া পাক বটফলের গন্ধে অনেকদিনের একটা স্মৃতি মনে উদয় হইয়াছিল--ছোট কাচের পর্যকলা বসানো মোমবাতির সেকেলে লণ্ঠন হাতে তাহার বাবা শশী যোগীর দোকানে আলকাতরা কিনিতে আসিয়াছে।-সেও আসিয়াছে বাবার কাধে চড়িয়া বাবার সঙ্গে-কাচের লন্ঠনের ক্ষীণ আলো, আধ-অন্ধকার বঁাশবন, বাঁওড় হইতে নাল ফুল তুলিয়া বাবা তাহার হাতে দিয়াছো-কোন শৈশবের অস্পষ্ট ছবিটা, অবাস্তব, ধোয়া-ধোয়া! পাকা veby A