পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৬৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাণু একটা খাতা বাহির করিয়া আনিল। অপু খাতাটা চিনিতে পারিল না। রাণু বলিল-এতে একটা গল্প আধখানা লিখেছিলি মনে আছে ছেলেবেলায় ? শেষ লিখে দে এবার। --অপু অবাক হইয়া গেল। বলিল-বাণুদি, সেই খাতাখানা এতকাল রেখে দিয়েছ তুমি ? বাণু মৃদু হাসিল। --বেশী দাও । এখন আমার লেখা কাগজে বেরুচ্ছে, তোমার খাতখানায় গল্পটা অর্ধেক রাখব না । কিন্তু কি ভেবে খাতাখানা রেখেছিলে রাণুদি এতদিন ? -শুনাবি ? একদিন তোর সঙ্গে দেখা হবেই, গল্প শেষ ক’রে দিবিই জানতুম ! অপু মনে ভাবিল-তোমাদের মত বাল্যাসঙ্গিনী জন্ম জন্ম যেন পাই রাণুদি। মুখে বলিল—সত্যি ? দেখি-দেখি খাতাটা। খাতা খুলিয়া ব্যাল্যের হাতের লেখাটা দেখিয়া কৌতুক বোধ করিল। রানীকে দেখাইয়া হাসিয়া বলিল-একটা পাতে সাতটা বানান ভুল ক’রে বসে আছি। দ্যাখো । সে এই মঙ্গল রূপিণী নারীকেই সারাজীবন দেখিয়া আসিয়াছে।--এই স্নেহময়ী, করুণাময়ী নারীকে-হয়তো ইহা সম্ভব হইয়াছে এই জন্য যে, নারীর সঙ্গে তার পরিচয় অল্পকালের ও ভাসা ভাসা ধরনের বলিয়া-এ অপর্ণা ছ’দিনের জন্য তার ঘর করিয়াছিল-লীলার সহিত যে পরিচয় তাহা সংসারের শত সুখ ও দুঃখ ও সদাজাগ্রত স্বার্থদ্বন্দ্বের মধ্য দিয়া নহে-পটেশ্বরী, রাণুদি, নির্মলা, নিরুদি, তেওয়ারী-বধু-সবই তাই। তাই যদি হয়। অপু দুঃখিত নয়-তাই ভালো, এই স্রোতের শেওলার মত ভাসিয়া বেড়ানো ভবঘুরে পথিক-জীবনে সহচর-সহচরীগণের যে কল্যাণপাণি ক্ষুধার সময় তাহাকে অমৃত পরিবেশন করিয়াছে’- তাহাতেই সে ধন্য, আরও বেশী মেশামোশি কারিয়া তাহাদের দুর্বলতাকে আবিষ্কার করিবার শখ তাহার নাই-সে যাহা পাইয়াছে চিরকাল সে নারীর নিকট কৃতজ্ঞ হইয়া থাকিবে ইহার জন্য। ভাদ্রের শেষে আর একবার কলকাতায় আসিয়া খবরের কাগজে একদিন পড়িল, ফিজি-প্রত্যাগত কয়েকজন ভারতীয় আর্যমিশনে আসিয়া উঠিয়াছেন। তখনই সে আর্যমিশনে গেল । নিচে কেহ নাই, জিজ্ঞাসা করিলে একজন উপরের তলায় যাইতে বলিল । ত্রিশ বত্রিশ বৎসরের একজন যুবক হিন্দীতে তাহার আগমনের উদ্দেশ্য জিজ্ঞাসা করিল। অপু বলিল-আপনারা এসেছেন শুনে দেখা করতে এলুম। ফিজির সব খবর বলবেন দয়া করে ? আমার খুব ইচ্ছে সেখানে যেতে। Sh