পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৬৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একা-দোক্কা খেলিতে ডাকে। চড়কতলার মাঠে খেলা জমিয়া ওঠে। অবশ্য কাজল খেলায় খুব পটু নহে। তাহার তাকও প্রশংসার অযোগ্য। তিন নম্বর ঘর টিপ করিয়া ঘুটি ছুড়িলে সেটা পাচ নম্বর ঘরে পড়িবেই। অবশ্য প্রত্যেক বারই কাজল এমন ভান করিয়া থাকে যেন ওটা পাচ নম্বর ঘরেই ফেলিবার চেষ্টা করিতেছিল। খেলা সমাপ্ত হইলে সন্ধ্যার আবছা আঁধারে বাড়ী ফিরিবার সময় কাজল চনুকে প্রশ্নটা করিয়াই ফেলে—তুই জানলার পাশে শুয়ে ঘুমোস ? চনু বাক্যালাপের গতি কোনদিকে বুঝিতে না পারিয়া সংক্ষেপে বলে-ছ। --রাত্তিরে জাগিাসনে কখনো ? চাদনী রাত্তিরে ? -कोऊ ! --কিছু দেখিস ? মানে, ভাবিস কিছু ? —ভাবিব। আবার কি ? দাদা গায়ে পা তুলে দেয় বলেই না ঘুম ভাঙে। পা-টা নামিয়ে দিয়েই আবার ঘুমিয়ে পডি। কেন রে ? —মনে হয় না কিছু ? এই, কোন অদ্ভুত দেশের কথা, কি গল্পে-পডা কোন লোকের কথা ? গল্প বলিতে চান্ত পডিয়াছে কথামালার ‘ব্যাঘ্র ও পালিত কুকুর”। তাহা চাদনী রাত্রে স্বপ্ন দেখিবার জন্য খুব আদর্শ উপাদান নহে। কাজলটা কি পাগল নাকি ? সন্ধ্যাবেলা যত উদ্ভট কথা । না, চন্দ্রালোকিত রাত্রে অগ্রজের পদতাড়নায় জাগিয়া তাহার বিশেষ কিছু মনে হয় না। কাজলও যে বিশেষ কিছু দেখিতে পায়, তাহা নহে। কিন্তু এক ফালি চাদের আলো—একটি পাতা খসিয়া পড়া হইতে সে অনেক কিছু কল্পনা করিয়া লাইতে পারে। নিজের বৈশিষ্ট্য বুঝিবার বয়স তাহার হয় নাই—তবুও তাহার সঙ্গীদের সহিত একটা চিন্তাগত পার্থক্য সে অনুভব করিতে পারে। যেমন দুৰ্গা-পিসির কথা ! বাবা ও রাণুপিসির কাছে গল্প শুনিয়া সে দুৰ্গার চেহারা ও স্বভাব কিছুটা কল্পনা করিয়া লইয়াছে, নির্জনে বসিয়া ভাবিতে চেষ্টা করিয়াছে, পিসি সামনে দাডাইয়া কথা বলিতেছে। এই একটা ফল কুড়াইয়া লইল কোন গাছতলা হইতে, এই আধখানা ভাঙিয়া তাহাকে দিল খাইতে। অপু ও রাণী দুৰ্গার শৈশবের গল্পই করিয়াছে-এখন থাকিলে পিসির যে অনেক বয়স হইত, তাহা কাজলের কখনও মনে হয় নাই। শুধু এইটুকু সে বোঝে, পিসি বঁাচিয়া থাকিলে তাহাকে খুব ভালবাসিত। নিশ্চিন্দিপুরের সহিত কাজলের একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়িয়া উঠিয়াছিল। অথচ কোথায় ছিল সে এক বৎসর আগে! দাদামশায়ের ভয়ে জুজু হইয়া থাকিতে হইত। প্রকৃত ভালবাসার স্বাদ সে দাদামশায়ের কাছ হইতে পায়। èR