পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার প্রাণের অংশ দিয়ে তৈরী স্বপ্ন, বাবা । চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে। তুমি পিসির কথা শুনে চলে তো ? বেশী রাতে বেরুবে না। নদীর ধারে বেশী ষেও না। আমার বাক্সে মে ফাস্ট বুকটা আছে--সেটা মনোযোেগ । দিয়ে পড়বে। এখানে অনেক মজার মজার জিনিস দেখছি।-ফিরে তোমাকে গল্প বলবো । তোমাকে বড় দেখতে ইচ্ছে করে । আমার জন্য তোমার মন খারাপ হয় না ?” বাবার জন্য তাহার মন খারাপ হয় কি না ! এমন দিন কবে গিয়াছে যে, সকাল হইতে রাত্রির মধ্যে বাবার কথা ভাবে নাই ? বরং বাবাই তো তাহাকে ফেলিয়া বেশ থাকিতে পারিতেছে। বাবা ফিরিয়া আসিলে সে বঁাচে । দুপুরে অপুর রাখিয়া-যাওয়া সুটকেশ হইতে ডায়েরীখানা বাহির করিয়া সে পডিতে বসে। ইহা সে মধ্যে মধ্যেই পডিয়া থাকে । এক বৎসরের ঠাসবুনোট লেখায় ভােত ডায়েরী। পাতা উলটাইতে উলটাইতে এক জায়গায় তাহার দৃষ্টি আটকাইয়া গেল। কাশীর কথা লেখা আছে কয়েক পাতা । বাবা তাহাকে রাখিয়া একবার কাশী গিয়াছিল বটে । কাজল পাড়িয়া ফেলে পাতা কয়টা। এ কাহার কথা লেখা ! লীলা কে ? তাহার মেয়ের সহিত বাবা তাহার বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছে যে ! বিবাহ ! এ তো বড় মজার কথা হইল। কলিকাতায় থাকিতে গলির ওপারে একটা বাড়ীতে সে বিবাহের উৎসব দেখিয়াছিল। বর মোটরগাড়ি করিয়া মালা-চন্দন পরিয়া আসে। পরে গাড়ী হইতে নামিলে একজন মেয়ে কুলোর ওপর কি-সব সাজাইয়া তাহাকে বরণ করে ও অন্যান্যরা জোরে হাতপাখা নাড়িয়া বাতাস করিতে থাকে। ওপাডার চনুর দিদিরও তো বিবাহের কথা চলিতেছে । চনু বলিতেছিল, দিদি কালো বলিয়া নাকি পাত্রপক্ষ এক হাজার টাকা পণ চাহিয়াছে। বেশ মজা তো । বিবাহ করিলে সেও টাকা পাইবে তাহা হইলে । কিন্তু বাবা তো লিখিতেছে লীলার (এ কে ? ) মেয়ে ফার্স। ফর্সা মেয়েকে বিবাহ করলে টাকা দিবে তো ? টাকা পাইলে সে সব টাকা বাবাকে দিয়া দিবে। আচ্ছা, কত বৎসর বয়স হইলে বিবাহ হইয়া থাকে ? কাজল দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ সেদিন সকাল হইতে মেঘ করিয়াছিল-কিন্তু বৃষ্টি হয় নাই। সুন্দর একটা ছায়াঘন আমেজে গ্রামটা কিমাইতেছিল। পাখীর ডাক শোনা যাইতেছিল। কম। কেবল বহু উচুতে প্রায় মেঘের গায়ে গায়ে কয়েকটা চিল উড়িতেছিল। Se