পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহাকে অভুক্ত অবস্থায় রাস্তায় বেড়াইতে হইয়াছে শুকনো মুখে। কেহ ভালবাসিয়া বলে নাই, আহা, তোমার বুঝি খাওয়া হয় নি ? এসে যা হয় দুটো ডাল-ভাত-না, সেরূপ কেহ বলে নাই। বরং তেওয়ারী-বধূ বেশ ভাল ছিল, তাহার স্নেহ ছিল। জীবনের পথে তেওয়ারী-বধূর মত কয়েক জনের নিকট হইতে স্নেহস্পর্শ পাইয়াই তো কষ্টের মধ্যে ও মানুষ সম্বন্ধে সে হতাশ হইয়া পড়ে নাই । আজ টাকা কয়টা পকেটে করিয়া সে পরিচিত স্থানগুলিতে একবার করিয়া গেল । মনে মনে ভাবিল, মানুষ যেখানে কষ্ট পায়, ভগবান সেইখানেই আবার তাকে সুখ দেন। আমার সেই পুরানো মেসের সামনেই পকেটে আজ একগাদা টাকা নিয়ে দাডিয়ে আছি । কথাটা ভাবিয়া তাহার কেমন অদ্ভুত লাগিল। মনে হইল, রাস্তার ওপারের ঐ দোকানে বসিয়া-থাকা ধূমপানরত মানুষটিকে ডাকিয়া বলে-শুনুন ; আমি ঐ গলিতে থাকতাম অনেকদিন আগে । খেতে পেতাম না, কলেজের মাইনে দিতে পারতাম না । মা বাড়ীতে কষ্ট পেতেন, টাকা পাঠাতে পারতাম না । আর এখন আমার পকেটে এই দেখুন, অনেক টাকা-অনেক । এ দিয়ে আমি কি করি বলুন তো ? কিছুদিনের মধ্যেই অপু আরও একটি পত্রিকায় ধারাবাহিক উপন্যাস লিখিতে শুরু করিল। বাজারে তাহার বেশ নাম । বিশেষ করিয়া তরুণদের কাছে তাহার নূতন দৃষ্টিভঙ্গী অত্যন্ত আদর পাইতেছে। মালতীনগরের সেই তরুণ বাহিনী রোজ তাহার দুর্গ আক্রমণ করে, সে মাঝে মাঝে বিরক্ত হইলেও মুখে কিছু বলিতে পারে না । ছেলেগুলোকে সে পছন্দ করে, কিন্তু বড় বেশী বক বক করে তাহারা । অপুর মাথা ধরিয়া যায় । অপু প্রতি মাসে একগাদা পত্রিকা ও বই কিনিয়া থাকে। ছেলের জন্য ভালো শিশুসাহিত্য আনে। এমন বই আনে, যাহা কাজলের মনের গভীরে ঘুমন্ত ইন্দ্রিয়গুলিকে জাগাইয়া তোলে। কূপমণ্ডুক হইয়া বঁচিয়া থাকিবার কোন অর্থ নাই, ছেলেকে সে মধ্যবিত্ত মনের অধিকারী করিয়া গড়িবে না । অপু নিজে ওয়াইড ওয়ার্লড ম্যাগাজিন পড়িতে ভালবাসে। সে পড়ে ও ভাল গল্প পাইলে তৎক্ষণাৎ ছেলেকে ডাকিয়া শোনায়। এই ভাবে অপু ছেলের মনে একটা পিপাসা জাগায়। কাজলের বিশেষ বন্ধু কেহ নাই, স্কুলে নাই, পাড়াতেও নাই। সে সমবয়সীদের মত দৌড়বীপ করিতে পারে না-যে সব খেলায় শারীরিক কসরতের প্রয়োজন, সেগুলি কাজল সভয়ে এড়াইয়া চলে। চেষ্টা করিয়া দেখিয়াছে, সে পারে না। এইতো সেদিন বেণু আর শ্রীশ আম we