পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অত বিশাল দৃশ্যের সম্মুখীন যে হইয়াছে।--তাহার এই ক্ষুদ্রস্থানে আবদ্ধ থাকিয়াও কি আনন্দ পাওয়া সম্ভব ? অপু মনে মনে নিজের আনন্দের কারণটা অনুভব করিল। উন্মত্তের মতো উল্কাবেগে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরিয়া মরিলেই সার্থকতা লাভ হয় না। জীবনের আনন্দ রহিয়াছে অনুভূতির গাঢ়ত্বের ভিতর, জীবনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করিবার ভিতর। ফিজির সমুদ্রতীরে বসিয়া সে যেমন হইতে পারে-মালতীনগরেও হইতে পারে। স্তব্ধতা ভাঙিয়া অপু বলিল—তুমি গান গাইতে পারে।া হৈমন্তী ? একটু চুপ করিয়া থাকিয়া হৈমন্তী বলিল—পারি। -একখানা গাও না, শুনি । সামান্য পরেই হৈমন্তী গাহিল—‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা পরা ঐ ছায়া, ভুলালো রে ভুলালো মোরা প্রাণ ।” অপু সামনের দিকে ঝুকিয়া শুনিতেছিল। হৈমন্তীর গলা ভাল। বিশেষ করিয়া গানের কথা এবং উদাস সুর অপুর হৃদয় স্পর্শ করিল। পরিবেশের সঙ্গে গানটা যেন কেমন করিয়া মিলিয়া গেল । “ঘরেও নহে পারেও নহে যে জন আছে মাঝখানে, সেই বসেছে ঘাটের কিনারায়-” গান শেষ হইয়া গেল। অন্ধকার নামিয়াছে । বেশ বাতাস। অপু ওপরে তাকাইল—সব নক্ষত্র এখনও দেখা যাইতেছে না বটে, কিন্তু বৃহস্পতি গ্রহ ঝকঝকি করিতেছে। অপু বলিল-বৃহস্পতি চেন ? ঐ দেখ। ঐ যেটা ও-বাড়ীর কানিসের ডানদিকে জলজল করছে।-দেখছে ? 一专升1 --ভাবে দেখি, ওটা পৃথিবীর চেয়ে কত বড়। অন্ধকারের বুকে দীর্ঘপথে সূর্যকে পরিক্রম করছে সৃষ্টির উষা থেকে । ও রকম কত গ্রহ কত নীহারিকা ধূমকেতু মহাশূন্যের অকল্পনীয় ব্যাপ্তিতে ঘুরে বেড়াচ্চে। জীবনটা বড়ো অদ্ভুত, বড় সুন্দর, না ? অনুভব করো ? -করি। সেজন্যেই তো আপনার লেখা আমার ভাল লাগে । একটা দমকা বাতাস আসিল । সন্ধ্যামালতীর ঝাড়ে লাগিল দোলা। অনেক শুকনো পাতা খড়খাড় শব্দ করিয়া উঠানের উপর দিয়া সরিয়া গেল। কাজল বলিল-সেই ষে বাবা তুমি বলেছিলে, এদের দেবে সেই জিনিস অপু হাসিয়া বলিল-ওই স্থাখো, একদম ভুলে বসে আছি। কলকাতা wo